চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ফসলি জমির ওপরের মাটি টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে জমি উর্বরতা হারাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।
উপজেলায় আমন মৌসুমের ধান কেটে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার কাজ। এই মাটি নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন ইটভাটায়। ইটভাটার মালিক এবং কিছু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে শ্রমিক অথবা মাটি কাটার মেশিন দিয়ে জমির উপরিভাগের মাটি তুলে নিচ্ছে।
চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ৭টি ও পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলায় আরও ৬টি ইটভাটা রয়েছে। চিলমারী উপজেলার হারিয়ার ছড়া, ব্যাপারী বাজার, ঘুঘুর হাট, চাছলার বিল, রানীগঞ্জ, কয়ারপাড়, তিস্তার পাড়া, পুটিমারী, মজাইডাঙা, মাইলডাঙ্গা, মাটিয়ালসহ শতাধিক জায়গা থেকে ফসলি জমির মাটি ২ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মজাইডাঙ্গা এলাকার কৃষক সাজু মিয়া বলেন, ‘দুই বছর আগে আমার একটি জমি থেকে ৪ ফুট গভীর করে ভাটায় মাটি বিক্রি করে দিয়েছি। এ পর্যন্ত ওই জমিতে কোনো ফসল উৎপাদিত হয়নি। এতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ৫ থেকে ১০টি ট্রাক্টর সারা দিন চলাচল করায় এলাকা ধুলাবালিতে সয়লাব হয়ে গেছে।’
থানাহাট এলাকার মো. আয়নাল হক বলেন, ‘এভাবে মাটি কাটার ফলে জমি উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। জমির মাটি কেটে নেওয়ায় অনেক জমি নিচু হয়ে গেছে। এতে জমিতে দেওয়া সেচের পানি থাকছে না, নিচু জমিতে গিয়ে জমা হচ্ছে।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার মালিক বলেন, ‘অধিকাংশ ভাটার মালিকই এখন কৃষিজমির ওপর নির্ভরশীল। এর বাইরে মাটির কোনো উৎস পাওয়া যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষান দাস জানান, জমির উপরিভাগই হচ্ছে জমির প্রাণ। মাটি উত্তোলনের ফলে জমির উপরিভাগে মাটিতে থাকা জিপসাম ও দস্তা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তা ছাড়া মাটিতে যে জীবাণু থাকে এবং অণুজীবের কার্যাবলি রয়েছে, তা সীমিত হয়ে আসছে। ফলে জমিতে ফসল উৎপাদন দীর্ঘমেয়াদি কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষিজমির মাটি বিক্রির ক্ষতিকর দিকগুলো কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’