মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিবাহিনী আগের দিন সন্ধ্যায় মুক্ত করে পঞ্চগড়ের বোদা থানা। পরে মুক্তিবাহিনী বোদা থেকে তিন মাইল সামনে ঠাকুরগাঁওয়ের পথে ডিফেন্স নেয়। অন্যদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাঁও রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যৌথ বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে তারা ভুল্লী নদীর ওপর সেতুটি ভেঙে পাকা সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেয়। ২ ডিসেম্বর দুই পক্ষ নদীর এপার-ওপার থেকে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বিকেল নাগাদ মিত্রবাহিনীর একটি কলাম ডানদিক দিয়ে নদী পেরিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার মাহবুব আলমের ভাষায়, ‘মিত্রবাহিনীর নদী পার হওয়া কলামটি সড়কের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড ঝোড়ো অভিযান
শুরু করে।... এ অবস্থায় পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অবস্থান ছেড়ে দ্রুত পিছিয়ে যায় তারা।
মিত্রবাহিনী নদী পার হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায় ভুল্লীর পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান। ভুল্লী আমাদের দখলে চলে আসে।’ এরপর মিত্রবাহিনীর প্রকৌশলী দল আধা ঘণ্টার মধ্যে ভাসমান বোটের ওপর বেইলি ব্রিজ স্থাপন করে ফেলে। তাতে ট্যাংকগুলোকে পার করাও সহজ হয়ে যায়। শুরু হয় ঠাকুরগাঁও অভিমুখে অগ্রযাত্রা।
পাকিস্তানিরা পঞ্চগড়ে রিংয়ের আকারে দুটি ডিফেন্স লাইন বানিয়েছিল। মুজিব ব্যাটারির যোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় গভীর রাতে পঞ্চগড় আক্রমণ করায় হানাদারেরা পঞ্চগড় ছেড়ে চলে যায়। রংপুর অঞ্চলের মুক্তিবাহিনী নাগেশ্বরী থানা শত্রুমুক্ত করে আরও দক্ষিণে এগিয়ে যায়। নেত্রকোনার বিজয়পুরে হানাদারদের ওপর অ্যামবুশ করে পাঁচ সেনাকে হত্যা করে মুক্তিবাহিনী। তারা রাইফেলসহ ২১ রাজাকারকেও ধরতে সক্ষম হয়।
চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান দখলে করতে সক্ষম হয়। সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘সমগ্র বেলুনিয়া অঞ্চল বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শত্রুমুক্ত হয়েছিল। ফেনী মুক্ত করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ১৯৭১-এর ২ ডিসেম্বরের কথা বলছি।’ (সূত্র: লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে)
এভাবে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে পাকিস্তানি সেনারা। অবরুদ্ধ বাংলাদেশের ভেতরে অসংখ্য মুক্তাঞ্চলের সৃষ্টি হয়।