কুমিল্লা ইপিজেডের রাসায়নিক বর্জ্যযুক্ত পানিতে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ৭১টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। রাসায়নিক বর্জ্যের পানিতে হয়ে গেছে এ অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য ও পশু পালন। মানুষের শরীরে রোগ জীবাণুসহ দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কুমিল্লা ইপিজেডের রাসায়নিক বর্জ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের কৃষক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা।
সভায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ইপিজেডের রাসায়নিক বর্জ্যে এ অঞ্চলের ২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এতে ক্ষতি প্রায় ৫৯০ কোটি টাকা। রাসায়নিক বর্জ্যযুক্ত পানি খালে ফেলায় ওই অঞ্চলের কৃষকেরা এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছরের আন্দোলনের ফলে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা কখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। শিগগিরই বিষয়টি সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্তরা ফের আন্দোলন করার ঘোষণা দেন।
জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহম্মদ আখতার হোসাইনের পরিচালনায় সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, কুমিল্লা ইপিজেডের সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান মিয়া, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপপরিচালক শওকত আরা কলি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন চিশতি, কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের শামছুল হক, সিরাজুল হক, শহিদুল হক স্বপন, মোহাম্মদ আলী ফারুক, জহিরুল হক দুলাল, মো. হারুনুর রশিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, কৃষক ও সমবায়ীরা বক্তব্য দেন। বিষাক্ত পানি ওই অঞ্চলে প্রবাহিত হওয়ার কারণে শারীরিক সমস্যাসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই অঞ্চলের ৭১টি গ্রামের মানুষ।
সদর দক্ষিণ লালমাই হয়ে লাকসামের ডাকাতিয়া নদী পর্যন্ত ২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন সময় পরিবেশসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, ইপিজেড কর্তৃপক্ষও আশ্বাস দেয়, পরে তা আর বাস্তবায়ন হয় না। এ বিষয়ে সমাধান না হলে ইপিজেডের বিষাক্ত পানি ওই অঞ্চলের তিনটি খালে ছাড়তে দেওয়া হবে না। এ খালগুলোর প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তা ছাড়া এ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
কুমিল্লা ইপিজেডের সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, তাঁরা বিষাক্ত পানি শোধন করে খালে ছাড়েন। নগরীর বর্জ্য ও নোংরা পানি ওই খাল দিয়ে যায়। তা ছাড়া স্থানীয় খামারিদের পশুর উচ্ছিষ্টও খালে পড়ে, খাল সংস্কার না হওয়ার কারণে ও খালে কচুরিপানার কারণে পানি জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও কৃষকদের দাবির বিষয়টি তাঁরা দেখছেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন চিশতি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে এ খালগুলো প্রায় সময় পরিষ্কার করা হয়। খালের সংস্কার ও খননের বিষয়টি সিটি মেয়রকে জানানো হবে।