বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
টিকাটুলীর রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটে ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ। টিনশেড মার্কেটটিকে অগ্নি-দুর্ঘটনার জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিসের লাগানো ব্যানারের প্রতি গুরুত্ব নেই কারও। এটিসহ রাজধানীর ৫৮টি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছে ফায়ার সার্ভিস। তবে ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নেই তেমন।
পুরান ঢাকার একটি বড় এলাকার অনেক মানুষ কেনাকাটা করেন রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট থেকে। স্বামীবাগের গৃহবধূ তানিয়া আক্তার গতকাল রোববার কেনাকাটা করতে আসেন ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে। মার্কেটটি ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ, এ তথ্য জানেন–এমন প্রশ্নে বললেন, ‘ঢোকার সময় তো কেউ আটকালো না। কেমনে বুঝব!’
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মার্কেটে সর্বশেষ আগুন লাগে ২০১৯ সালে। চারপাশে চারটি পানির ট্যাংক বসানোসহ নানা শর্ত দিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। প্রায় তিন সপ্তাহ পর পানির ট্যাংক বসিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ ফিরে পায়। বাকি শর্তগুলো এখনো পূরণ হয়নি।
জানতে চাইলে রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের আহ্বায়ক ফজলুল হক বিপ্লব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোববারও (গতকাল) ফায়ার সার্ভিস আমাদের ডেকেছিল। তারা কিছু শর্ত দিয়েছে। আমরা বলেছি, ঈদের সময় ক্রেতার চাপ থাকে, এখন করা সম্ভব নয়। ঈদের পর ছুটির সময়ে সেগুলো আস্তে আস্তে করা হবে।’
রাজধানীতে গত দুই সপ্তাহে পরিদর্শন করে এই মার্কেটসহ ৫৮টি সুপার মার্কেট, শপিং মল ও মার্কেটকে অগ্নি-ঝুঁকিপূর্ণ বলছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫টি।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস। সার্বিক অবস্থান তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী। ফায়ার সার্ভিস সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপে ৫ হাজার ২০৭টি ভবন পরিদর্শন করে ১ হাজার ১৮৭টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পায়। এর মধ্যে ৬৭৪টি শপিং মল ও মার্কেট ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা পরিদর্শন করে চিঠিও দিই। স্বাক্ষর নিয়ে আসি। রাজধানীর কোন কোন মার্কেট ঝুঁকিতে আছে, আমরা তালিকা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিই। কারণ, বলপ্রয়োগের সুযোগ আমাদের নেই।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের আওতাধীন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে বিধিগতভাবে তা সিটি করপোরেশনকে দিই। রাজউক অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবন অপসারণের জন্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান নয়। কাজটা সিটি করপোরেশনের।’
ঝুঁকিপূর্ণ ৫৮টি মার্কেটের মধ্যে অন্তত ৫০টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায়। ডিএসসিসির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, তাঁরা এখনো ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিঝুঁকিসংক্রান্ত কোনো তালিকা পাননি। এ কারণে কার্যক্রমও শুরু হয়নি। এসব ক্ষেত্রে ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি সংশ্লিষ্ট ভবন পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।