টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এক মাসের ব্যবধানে নদীতে পানি বাড়ায় বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ২৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জের লাউড়েরগড় স্টেশনে ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে সুরমার সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নদীতীরবর্তী অন্তত ১০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। পৌরশহরের তেঘরিয়া, মল্লিকপুর, জলিলপুর ও উকিলপাড়া আবাসিক এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এ ছাড়া জেলা সদর থেকে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা ও দুর্গাপুর এই দুই স্থানের প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছে।
এসব এলাকার মানুষকে নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে সোমবার ভোরে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বিশ্বম্ভরপুরের সলুকাবাদ ইউনিয়নের ভাদেরটেক গ্রামের মিতারা আক্তার বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে আমরা দুবার ঢলের পানিতে আটকা পড়ছি। আমার বাড়ির উঠোনে পানি আইসা পড়ছে। যেভাবে পানি বাড়তাছে, ঘরের ভেতরই পানি চলে আসতে পারে।’
একই এলাকার বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ পানি আসায় কোনো প্রস্তুতি নিতে পারছি না। বাড়ির উঠানে গরুর খাবারের জন্য খড় আছিল, এসব ভাসাইয়া নিয়া গেছে। এখন গবাদিপশুর খাবারে সংকট হতে পারে।’
পাহাড়ি ঢলের ফলে জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় পুনরায় বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পাউবো।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিকভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জের নদ-নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
জহুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক উপজেলায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। প্রতি উপজেলায় ইতিমধ্যে ২০ মেট্রিক টন করে চাল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’