যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন লেগে এত মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনা আগে ঘটেছে কি না, আমার জানা নেই। তবে এই ঘটনায় আরও স্পষ্ট হলো, দেশের নৌপরিবহন ব্যবস্থায় যাত্রীদের সুরক্ষা-ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। লঞ্চে আগুন লাগার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। কিন্তু এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে কোন জায়গা থেকে আগুন লাগল, আর এত মানুষের প্রাণ গেল সেটা কর্তৃপক্ষের সামনে আনা উচিত। কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর আমাদের টনক নড়ে। তার আগে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিই না।
এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতি হয়ে গেছে। যার বলি হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
আমার জানামতে, বেশির ভাগ লঞ্চেই পর্যাপ্ত বয়া, লাইফ জ্যাকেট, আগুন নেভানোর সরঞ্জাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। লঞ্চে আগুন লাগতেই পারে বা কোনো ধরনের সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু বিপদে পড়লে যাত্রীরা কীভাবে লঞ্চ থেকে বের হবেন, তাঁদের জীবন কীভাবে রক্ষা করবেন, সেটার কোনো ব্যবস্থা থাকে না যাত্রীবাহী লঞ্চে। এসব যাত্রীবাহী বাহনে যদি পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট থাকত, সেটা পরে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ভেসে থাকতে পারত মানুষ। তাতে এত মানুষের প্রাণহানি হতো না।
দেশের লঞ্চগুলোয় এখন যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়ে ভাববার সময় এসেছে। আমাদের দেশের চলমান লঞ্চগুলোর মধ্যে যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়গুলো এখনো অনিশ্চিত। যার ফলে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। ভবিষ্যতে লঞ্চে আগুন লাগলে লঞ্চের মধ্যেই সেই আগুন যেন নেভানো যায়। সে জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখতে হবে। লঞ্চের নকশার দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত।
দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চের কোনো কারিগরি ত্রুটি আছে কি না, তা নিয়মিত দেখা উচিত নৌ কর্তৃপক্ষের। লঞ্চের ফিটনেস নিয়মিত নবায়ন করতে হবে। আমার জানামতে, এগুলো নিয়মিত হয় না। এসব বিষয়ে শৃঙ্খলা আনতে হবে। তাহলে যাত্রীবাহী লঞ্চে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। একই সঙ্গে দায়ী লঞ্চমালিকদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, সহকারী অধ্যাপক, বুয়েট ও গবেষক, সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট