নান্নু মিয়ার বাবার সংসারে ছিল প্রচণ্ড অভাব। এ কারণে নান্নুর লেখাপড়া নবম শ্রেণিতে এসেই থেমে যায়। বাধ্য হয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে রিকশা চালাতে আসেন ঢাকায়। ছোট্ট শরীরে হাড়ভাঙা খাটুনির আয়ে চলে তাঁর বাবার সংসার। বছরখানেক রিকশা চালানোর পর তাঁর শরীর আর কুলিয়ে ওঠেনি। ঢাকা থেকে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। কাজ শুরু করেন অন্যের জমিতে। অর্থাভাবে যাঁর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়, সেই নান্নু মিয়াই আজ কোটিপতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে তাঁর অধীনে ৫০ জন মানুষ কাজ করছেন। এ ছাড়া জমি, বাড়ি, একাধিক ট্রাক, গাড়ি রয়েছে তাঁর। শুধু বড় হওয়ার ইচ্ছা, পরিশ্রম আর কাঁচামালের ব্যবসা করে তিনি এখন সমাজের সামনের কাতারে অবস্থান করেছেন। আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন তিনি। তাঁর সততা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ‘সততার মূলধনই কোটি টাকা’— বলেন নান্নু মিয়া।
মো. নান্নু মিয়া উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাদারপুর গ্রামের বাসিন্দা (৩৮)। বাবার নাম আয়াত আলী সরকার ও মায়ের নাম মোছা. লাইলী বেগম। নান্নুর স্ত্রীর নাম সালমা খাতুন। তাঁদের পরিবারে সাব্বির (১৩) ও নাফিসা (৫) নামের দুই সন্তান রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে নান্নু সংগ্রাম ও নিজ ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন। বর্তমানে শ্রমিক থেকে হয়েছেন উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি।
উপজেলা কৃষক লীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব মামুনুর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা নান্নু মিয়া। তিনি ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নান্নু মিয়া তাঁর জীবনের স্মৃতিচারণ করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৯৮৪ সালে জন্মের পর থেকেই অভাব, অনটনে বড় হয়েছি। টাকার অভাবে পড়তে পারিনি। আমি ২০০৭ সালে ঢাকায় রিকশা চালাতে যাই। পরে বাড়িতে আসি। আমার বন্ধুরা স্কুলে গেলে আমি পাথারে (মাঠে) গম কাটার সময় তাঁদের দেখতাম, আর কাঁদতাম। পড়তে না পারায় খুব কষ্ট পেতাম। এখনো সেই কষ্ট আছে।’
নান্নু মিয়া আরও বলেন, ‘আমি কচু আর আলুর ব্যবসা করতাম। ব্যবসার সততার কারণে কোটি টাকার মাল আমার কাছে মানুষ বাকিতে বিক্রি করত। জীবনে অনেক পরিশ্রম করেছি তাই সফল হতে পেরেছি।’