টাঙ্গাইলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখা গেছে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে। এতে সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় তিন মাস পর করোনায় আবারও মৃত্যু দেখল টাঙ্গাইলবাসী। এ নিয়ে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত করোনায় জেলায় মোট ২৬১ জন মারা গেছেন।
এ ছাড়া গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার টানা দুই দিন সংক্রমণের হার ৪০ ছিল শতাংশের ওপরে। আর গতকাল শনিবার শনাক্তের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।
জেলার প্রধান কাঁচাবাজার পার্ক বাজারে সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এসে ভিড় জমিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করেন না। এ সময় কথা হয় সদর উপজেলার ধরেরবাড়ি এলাকা থেকে আসা মো. সুলতান নামের এক বাঁধাকপি বিক্রেতার সঙ্গে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরতে ভালো লাগে না। এত সকালে কি মাস্ক পরা লাগে? একটু পরেই তো চলে যাব।’ শুধু তিনি নন, তাঁর পাশেই রসুলপুর এলাকার সোবাহান, ময়নাল ও সদর উপজেলার বাঘিল এলাকার জুলমত আলী—তাঁরা কেউই মাস্ক পরেননি।
একই অবস্থা শহরের বিভিন্ন বাজার ও হাটগুলোতে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা মানছেন না সাধারণ মানুষ। শনিবার বিকেল চারটায় পৌর এলাকার বৈল্যাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এখানে অধিকাংশ মানুষ মাস্ক না পরেই কেনাকাটা করছেন। সংক্রমণ বাড়ার এমন মুহূর্তেও মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে অধিকাংশই কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা পাশ কাটিয়ে চলে যান। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও গণপরিবহনগুলোতেও উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ মানুষ এখনো উদাসীন স্বাস্থ্যবিধি মানতে।
সরেজমিন শহরের নতুন বাসটার্মিনালে দেখা গেছে, কোনো পরিবহনে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ যাত্রীদের মুখে নেই মাস্ক। যাঁরা মাস্ক ব্যবহার করছেন, তাঁরাও তা সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান যাত্রীরা। অনেকেরই আবার মাস্ক পরতে আপত্তির কথা জানান।
স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো পরিবহন এসব বিধান না মানে, তবে আমরা তার বিরুদ্ধে সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, প্রায় তিন মাস পর জেলায় করোনায় একজন মারা যান। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সম্প্রতি ঢাকায় তিনি আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। সেখানে তাঁর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। পরে ২৬ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। একই সঙ্গে টিকাও নিতে হবে। করোনা প্রতিরোধে সিভিল সার্জন অফিস কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গণি বলেন, ‘সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে মাঠ প্রশাসন কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সচেতন করতে প্রচার চালাচ্ছি। এর বাইরেও প্রয়োজন হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে গতকাল শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১০৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নতুন শনাক্তের মধ্যে সদরে ২১ জন, কালিহাতীতে ছয়জন, ধনবাড়ীতে পাঁচজন, বাসাইলে চারজন, নাগরপুরে তিনজন ও ঘাটাইলে একজন রয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত ১৭ হাজার ৬২০ জন। ২৬১ জন মারা গেছেন।