আবারও ঘুরেফিরে আরেকটি ১৮ অক্টোবর। বাংলা গানে এ দিনটি শোকে মোড়ানো আইয়ুব বাচ্চুর প্রস্থানের ঘটনায়। এই কিংবদন্তি রকস্টারের আজ তৃতীয় প্রয়াণ দিবস। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব। বাবাকে তিনি আদর করে ডাকতেন ‘বাবুই’ বলে।
বাবুইকে নিয়ে অনেক স্মৃতি! যখনই তাঁর কথা বলতে যাই, ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। বাবা হিসেবে তিনি ছিলেন একেবারেই আলাদা মানুষ। ভীষণ প্রটেকটিভ। সব সময় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেন। আমাদের পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিতেন।
প্রথম গিটার আমার জন্য
আমার জন্য বাবুই একটা গিটার কিনে এনেছিলেন। আমি তখন ও লেভেলে পড়ি। গিটার এনে বললেন, ‘আমি চাই, এটা তুমি নিজে নিজে শিখবে। তারপর একদিন আমার সঙ্গে স্টেজে বাজাবে।’ আমি ভাবলাম, এটা তো সহজ কাজ। হয়ে যাবে। প্রতিদিন তিনি মনিটর করতেন, আমি গিটার প্র্যাকটিস করি কি না। তখন আমি পড়ালেখা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। গিটার নিয়ে বসা হতো না। একদিন আমাকে বললেন, ‘তুমি গিটারটা আমাকে দিয়ে দাও। তুমি কিছু শিখছ না।’ আমি বললাম, ‘আমাকে কিছুদিন সময় দাও।’ বলতে বলতে দেখি আমার ভাই তাযওয়ার গিটার বাজাচ্ছে। আমাকে দেওয়া গিটারটা নিয়ে টুংটাং করতে করতে বাজানো শিখে গেছে ও। বাবা চেয়েছিলেন, আমিও বাজাই, মিউজিক শিখি। কিন্তু আমাকে দিয়ে হয়নি।
বাবুইয়ের সঙ্গে কনসার্টে
ছোটবেলা থেকেই তাঁর সঙ্গে অসংখ্য কনসার্টে গিয়েছি। স্টেজে বাবুইকে দেখে ভীষণ অবাক হতাম। বাড়িতে সামনাসামনি তাঁকে দেখতাম একরকম। আর স্টেজে গিটাররটা হাতে নিলেই সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ! একেবারে নিজের দুনিয়ায় চলে যেতেন।
তারকা বাবার মেয়ে
ছোটবেলায়ই বুঝেছিলাম, আমার বাবা আর দশজন বাবার চেয়ে আলাদা। মাঝেমধ্যে তিনি আমাকে স্কুল থেকে নিতে আসতেন। তখন স্কুলে ভিড় জমে যেত। তাঁর সঙ্গে যেখানেই যেতাম, আশপাশে অনেক মানুষ। ভীষণ ভালো লাগত। এত লোক আমার বাবুইকে চেনেন! বাবুই চলে যাওয়ার পর আরও বেশি করে বুঝেছি, ভক্তরা তাঁকে কত ভালোবাসেন!
তিন বছর আগের এই দিনে
বাবুইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয় ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর, তাঁর চলে যাওয়ার আগের রাতে। ঢাকার বাইরে শো করে ফিরছিলেন, আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। বাসায় পৌঁছানোর পর বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা-৯টার দিকে আবার কথা হয়। ওই সময় খুব কাশি হচ্ছিল তাঁর। বাবুই বললেন, ‘আমি ঘুমাব। অনেক টায়ার্ড লাগছে।’ আমি তখন অস্ট্রেলিয়ায়। রাত আড়াইটা তখন। কল্পনায়ও আসেনি, এটাই তাঁর সঙ্গে আমার শেষ কথা হবে। পরদিন অস্ট্রেলিয়া সময় বেলা ১টার দিকে আমি ফোন করি। বাংলাদেশে তখন সকাল। ফোন করছি, কিন্তু বাবুই ফোন ধরছেন না। এমন কখনো হয়নি। এভাবে এক ঘণ্টা। আমার কিছুটা আতঙ্ক লাগতে শুরু করে। অনেককে ফোন করি। কিন্তু বাবুইয়ের চলে যাওয়ার খবরটা আমাকে বলেননি কেউ। হয়তো সাহস পাচ্ছিলেন না। পরে আমি টিভিতে দেখলাম, স্ক্রল যাচ্ছে। বুঝলাম সব শেষ। ওই দিনের ঘটনা আমি কখনো ভুলব না।
অনুলিখন: খায়রুল বাসার নির্ঝর