সাইফুল মাসুম, ঢাকা
রাজধানীর বাংলামোটর ও কারওয়ান বাজারের মাঝে অবস্থিত ত্রিভূজাকৃতির পান্থকুঞ্জ পার্কটি কয়েক বছর আগেও বেশ দৃষ্টিনন্দন ও প্রাণবন্ত ছিল। আশপাশের এলাকার প্রবীণেরা পার্কটিতে সকাল-বিকেল হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করতেন। তপ্ত দুপুরে গাছের সবুজ ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিতেন পথচারীরা। কয়েক বছরের ব্যবধানে ছোট উদ্যানটি এখন বেহাল। উন্নয়নের নামে বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে রয়েছে পার্কটি। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবুজ ও উন্মুক্ত স্থানের অভাবে ইতিমধ্যেই রুদ্ধশ্বাস ঢাকায় এ ধরনের ঘটনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
অধিকাংশ গাছ কেটে সেখানে রাখা হয়েছে ইট-পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। অপরিকল্পিত অবকাঠামো তৈরি করে উন্মুক্ত জায়গা সংকুচিত করা হয়েছে।
পান্থকুঞ্জ পার্কটি কার্যত নষ্ট হওয়া শুরু হয় ২০১৮ সালে। তখন ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণ (ডিএসসিসি) ‘জলসবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় এর জন্য ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সে সময় বলা হয়েছিল, এক বছরের মধ্যে উন্নয়নকাজ শেষ হলে পার্কটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মাটি খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়া পার্কটিতে তেমন কোনো কাজ করেননি। পরে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলার সময় পার্কের বড় অংশে অনেক নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়। এখন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি সংযোগ সড়ক পান্থকুঞ্জ পার্কে নামাতে কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকেরা।
গতকাল পার্কটির কাছে দেখা যায়, এর চারপাশ টিনের বেড়ায় ঘেরা। ভেতরে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে রাখা। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা। পার্কের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। দক্ষিণ অংশে পার্কটির কিছু জায়গায় বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস), টয়লেট ও ওয়াসার একটি পানির পাম্প। পার্কের ভেতরে দেখা যায়, রিকশা ও ভ্যানগাড়ির গ্যারেজ।
মগবাজারের দিলু রোডের বাসিন্দা প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম রাশেদ বলেন, ‘আসা-যাওয়ার পথে এ পার্কে অনেক আড্ডা দেওয়ার স্মৃতি রয়েছে। পান্থকুঞ্জকে আবার কোনো দিন আগের মতো পাব কি না, জানি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির স্থপতি ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জলসবুজে ঢাকা প্রকল্পের আওতায় পার্কটির উন্নয়ন করার কথা ছিল। তখন ডিজাইন করা হয়েছে। পরে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ ও এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়কের কারণে পার্কের ডিজাইন নতুন করে করা হয়। এখন পার্কটি কোন অবস্থায় আছে ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ বলতে পারবে।’
ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, তাঁর কাছে পার্কের সর্বশেষ অবস্থার তথ্য নেই। তিনি পরে খোঁজ নিয়ে জানাবেন।
নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খানের অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পান্থকুঞ্জ হচ্ছে ওই এলাকার আশপাশের মানুষের জন্য একমাত্র পার্ক। মেগা প্রজেক্টের নাম দিয়ে একে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ ও এক্সপ্রেসওয়ের নাম দিয়ে পার্কটি ধ্বংস করা হয়েছে।’