খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
ভালো নেই কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পালপাড়ার এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। যদিও কেউ কেউ পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যের এ পেশা এখনো ধরে রেখেছেন।
জানা গেছে, পালপাড়ায় এক সময় শতাধিক পরিবারের অন্তত ৫০০ জন মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আগে এখানকার পণ্য দিয়ে জেলার চাহিদা পূরণ হয়ে অন্য স্থানেও পাঠানো হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন মাত্র ৬টি পরিবার ধরে রেখেছে এ শিল্প।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের দাম কম ও সহজলভ্যর জন্য এখন মাটির তৈরি পণ্য কেউ ব্যবহার করছেন না। পাশাপাশি দিন দিন বাড়ছে কাঁচামালের দামও। ফলে বাড়তি খরচ ও চাহিদা না থাকায় পেশা বদলে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
শিমুলিয়ার পালপাড়ার উপেন পাল (৫২) স্ত্রী অনিতা পালকে নিয়ে তৈরি করেন মাটির স্যানিটারি ল্যাট্রিনের চাক। তার একটি ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাবা-ঠাকুরদাদের এ কাজ করতে দেখেছি। এখন তাঁরা নেই। বাবা-ঠাকুরদার জাত ব্যবসা ধরে রেখেছি। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এ পেশায় কাজ করছি। কিন্তু আমার ছেলেরা এ পেশায় কাজ করতে চায় না।’ এই শিল্পের ঐতিহ্যের কথা বললে তিনি বলেন, ‘দিনে দিনে মাটির তৈরি জিনিসের চাহিদা কমছে। ঐতিহ্য দিয়ে তো আর সংসার চলে না।’
একই গ্রামের সুশান্ত পাল (৪০) বলেন, ‘দিনে দিনে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমছে, এখন স্যানিটারি ল্যাট্রিনের চাক বা রিং বা কুয়ার রিং তৈরি করছি। এটার স্থায়ীত্ব সিমেন্টের তৈরি রিংয়ের তুলনায় অনেক বেশি। শত বছরের তৈরি রিং এখনো অক্ষত অবস্থায় দেখা যায়।’
নিপেন পাল (৫৫) বলেন, ‘বাবা-ঠাকুরদার পেশা জন্মগতভাবে পেয়েছি। এ জন্য ইচ্ছে করলেও ছাড়তে পারি না।’
খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সরকার মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ঋণদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।