এমনটা যদি হতো তাহলে কেমন হতো—কোনো রূপকথার বই পড়ছেন, বই থেকে কোনো চরিত্র জলজ্যান্ত হয়ে সামনে এসে দাঁড়াল! এই ধারণা নিয়ে মার্কিন লেখক আর এল স্টাইন লিখেছেন ধারাবাহিক ভৌতিক উপন্যাস ‘গুজবাম্পস’। এর ওপর ভিত্তি করে অবশ্য পরে নাটক-সিনেমাও হয়েছে। যা-ই হোক, বাস্তবে এমনটা হয় না—বইয়ের কোনো চরিত্র আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় না, আমাদের বিরক্ত করে না কিংবা আনন্দ দেয় না—এ কথা আমরা হয়তো ভালো করেই বুঝে গেছি। এতটাই বুঝে গেছি যে আমাদের কল্পনার জগতেও বইয়ের চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে না। আর এ কারণেই হয়তো আমরা ধীরে ধীরে বই পড়া ছেড়ে দিয়েছি এবং বই পড়তে ভুলে গেছি!
এই ফেব্রুয়ারি মাস শুধু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাস নয়, শুধু বইমেলার মাস নয়, এ মাসের ৫ ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করা হয়েছিল জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে। সেটা ২০১৭ সালের কথা। খুব বেশি দিন আগে নয়। সে বছরের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রতিবছর ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। উদ্দেশ্য—দেশের জনগণের পাঠাভ্যাস সৃষ্টি এবং বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগার, অর্থাৎ লাইব্রেরিগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করা। আমাদের যে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর আছে, সেটি ২০১৮ সাল থেকে এই দিবস পালন করে আসছে দেশব্যাপী।
অথচ যাদের জন্য এই আয়োজন—পাঠক, তাদের পদচারণই নেই লাইব্রেরিগুলোতে! গত সোমবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত ছয়ের পাতার প্রথম খবরটিতে চোখ পড়লেই বোঝা যায়, গ্রন্থাগারে বই থাকলেও সেই বই খুলে পড়ার জন্য পাঠক নেই।
লাইব্রেরি আছে, সেখানে বই আছে, কিন্তু পাঠক কেন নেই? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছিলেন খবরটির প্রতিবেদকও। করোনার কারণে অনেকের লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। কেউ কেউ পড়ার পর্যাপ্ত উপকরণ ও পরিবেশ পান না গ্রন্থাগারগুলোতে। একাডেমিক পড়াশোনার চাপের কারণেও অনেক শিক্ষার্থী ‘আউট’ বই পড়ার সুযোগ পায় না। এমনকি স্কুলের নিজস্ব লাইব্রেরিতেও দেখা যায় না শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকেরাই বলছেন, ছাত্রছাত্রীদের অনাগ্রহের কথা। আবার কিছু স্কুলের লাইব্রেরি সচল না থাকার কথাও জানা যায়।
খুব সহজ করেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার উপায় বাতলে দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মো. জাবের হোসাইন। লাইব্রেরির ‘মার্কেটিং’ করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। গ্রন্থাগারের আকর্ষণ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিতে হবে, নতুন পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী লাইব্রেরির পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
অথচ আরও সহজ হয়ে যায় এই সমাধানটাই, যখন পরিবার থেকে বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মানো যায় শিশু বয়সে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ‘আউট’ বইগুলো যে জীবনের শিক্ষা দেয় একজন মানুষকে, তা নিশ্চয়ই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা বোঝেন। তাঁরাই যদি পরবর্তী প্রজন্মের মানসিক বিকাশে সাহায্যের জন্য ঘরে বইভর্তি একটা শেলফ রেখে দেন, তাতে মন্দ হয় না।