মাগুরার শ্রীপুরে বিডিআর সদস্য (অব.) রাশিদুল মোল্লা হত্যার সময় ঘটনাস্থলে না থাকলেও বেশ কয়েকজনকে আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীদের দাবি, ঘটনার সময় তাঁদের কেউ কর্মস্থলে ছিলেন, কেউ ছিলেন নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, কেউ বা ছিলেন চিকিৎসার জন্য ঢাকায়। তাঁদের কাছে এ-সংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও রয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলার কাজলী গ্রামের হান্নান মোল্লার সঙ্গে হোগলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাই পবন মল্লিকের বিরোধ চলছিল। এর জেরে গত ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজলী বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাজলী গ্রামের মতিয়ার রহমান মোল্লার বাড়ির সামনে রাশিদুল মোল্লার ওপর হামলা করা হয়।
এ সময় রাশিদুল মোল্লাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে আহতদের মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাশিদুল মোল্লাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাশিদুল মোল্লার ভাই সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪৪ জনকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
ফয়জুর রহমান লাবু বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি শ্রীপুরে ছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে শ্রীপুর সরকারি এমসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমুল ইসলাম, কাজলি কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান আশরাফুল ইসলাম, শ্রীপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম অধিকারী ও স্ত্রী আমার সঙ্গে ছিলেন। আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি শ্রীপুরেই থাকি। ঘটনার সময় আমি শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভা শেষে শ্রীপুর কলেজ মোড়ের নিজ দোকানে ছিলাম। যার যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে।’
আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি গুরুতর অসুস্থ। হার্টে রিং পরানো। ঘটনাস্থলেও ছিলাম না। কিন্তু তারা আমাকেও আসামি করেছে।’
গোলাম মুন্সি বলেন, ‘আমার বয়স ৬৭ বছর। আমি নিজেই চলতে পারি না। অথচ আমার বয়স ৫০ বছর উল্লেখ করে মামলার আসামি করা হয়েছে।’
রেজাউল মোল্লা বলেন, ‘আমি ঘটনার দিন চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছিলাম। যার প্রমাণ আমার কাছে আছে।’
সাদ্দাম মুন্সি বলেন, ‘আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। ওই সময় আমি ডিউটিতে ছিলাম।’
লিটু বলেন, ‘আমি তখন কাজলী বাজারে নিজের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ছিলাম। আমাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।’
মামলার ৩২ ও ৩৩ নম্বর আসামি কলেজছাত্র রাকিব ও রিফাত বলেন, ‘আমরা দুই ভাই শ্রীপুর সরকারি কলেজে পড়ি। ঘটনার সময় আমরা মসজিদে নামাজে ছিলাম। আমাদের মিথ্যাভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী এম এ রশিদ এ বিষয়ে বলেন, ‘মামলায় ৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। একটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এত মানুষ যুক্ত থাকতে পারে না। এ মামলায় অনেকেই ঘটনাস্থলে না থেকে আসামি হয়েছেন। আশা করছি, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত না তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি শুকদেব রায় বলেন, মামলার তদন্তকাজ চলছে। তদন্তে কেউ নিরপরাধ প্রমাণিত হলে মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন।