বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাসমান ধান-চালের হাটের পরিচিতি গোটা বরিশাল জুড়ে। তবে ঐতিহ্যবাহী ধান-চালের হাটটির জৌলুস ক্রমেই ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভাসমান ধান-চালের হাটে গিয়ে অল্পসংখ্যক কুটিয়ালের (ধান-চাল ব্যবসায়ী) দেখা মেলে। ক্রেতার সংখ্যাও কম। মোটমাট ২৫-৩০টি নৌকা ছিল।
লোকমুখে শোনা যায় সন্ধ্যা নদীতে এক সময় ভাসমান ধান-চালের হাটে এত বেশি নৌকা আসত যে, নদীর এপার থেকে ওপারে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকা, এ রকম করেই নদী পাড় হওয়া যেতো। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধান-চাল বেচা কেনায় ব্যস্ত থাকতেন ধান-চাল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে ওই হাটটির সেই রমরমা নেই। অল্প কিছু ব্যবসায়ী কোনোরকমে টিকিয়ে রেখেছেন এখানকার ঐতিহ্যবাহী ধান-চালের ব্যবসা। শতাধিক আড়তের মধ্যে এখন চালু রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। এ কারণে সন্ধ্যা নদীতে ভাসমান ধান-চালের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাও কম।
এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না সেই ঐতিহ্যবাহী মলঙ্গা বালাম, কাজলা চাল। একসময় বানারীপাড়ার বালাম চাল সারা বাংলাদেশে খুব নাম ছিল। বরিশালের বানারীপাড়া বন্দরের উত্তর পাড়ে একসময় শতে শতে ধান-চালের আড়ত ছিল। কুটিয়াল, শ্রমিক, কয়ালে উত্তরপাড় বাজার বন্দর রাত-দিন জমজমাট থাকত। শনি ও মঙ্গলবার হাট এবং রোববার ও বুধবার গালা বসত। বাকি তিন দিন মাল ওঠানো আর মোকামে পাঠানোর কাজ ব্যস্ত থাকত ধান-চাল ব্যবসায়ীরা। ধান-চালের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এখন এ কাজ ছেড়ে অন্য কাজ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বানারীপাড়ার উত্তরপাড়ের কুটিয়াল মোস্তফা হাওলাদার বলেন, ‘একসময় আমার বাপ দাদারা এ কাজ করতেন। আমিও এ কাজ করি। বাজারের এখন যে পরিস্থিতি কত দিন করতে পারব জানি না। তা ছাড়া এখন ডিজিটাল অটো মিল হওয়ার কারণে এ ব্যবসা কমে যাচ্ছে।’
বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা জানান, বানারীপাড়ার ধান-চালের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাকে ফিরিয়ে আনতে হলে দরকার প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। এ ক্ষেত্রে ধান গবেষণা কেন্দ্র বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বানারীপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা বলেন, ‘এ বিষয়ে কুটিয়াল, আড়তদার, ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে এলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করব।’