বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি ভাঙচুর করা হয় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন। তখন থেকে এক মাসের বেশি বন্ধ থাকার পর গত ২৫ আগস্ট ওই দুটি স্টেশন বাদে মেট্রোরেল আবার চালু হয়। মেরামতকাজের পর আজ শুক্রবার থেকে চালু হচ্ছে কাজীপাড়া স্টেশন। এদিন থেকেই মেট্রোরেলের সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও চলা শুরু হচ্ছে।
রাজধানীতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, এখন থেকে মেট্রোরেল শুক্রবারেও চলবে। তবে শুক্রবার ট্রেন চলবে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাতে স্বাভাবিক সময় পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে দুই ট্রেনের মধ্যে সময় অনুযায়ী ব্যবধান থাকবে ১০ মিনিট, ৮ মিনিট ও ১২ মিনিট।
শুক্রবারেই (আজ) কাজীপাড়া স্টেশন চালু হবে জানিয়ে মেট্রোরেলের পরিচালনা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, স্টেশনটি চালু করতে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শুধু যাত্রীদের কথা ভেবে দ্রুত এটা চালু করা হচ্ছে। এখানে এখনো অনেক সরঞ্জাম লাগবে, যা আস্তে আস্তে ঠিক করা হবে। তখন আরও অর্থ ব্যয় হবে।
মেট্রোরেলের দুই স্টেশনে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পর বিগত সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর মেরামতকাজে এক বছরের বেশি সময় ও বহুগুণ বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছিলেন।
মিরপুর-১০ স্টেশন চালু নিয়ে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, এই স্টেশন নিয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। সেখানে কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা কমিটি নিরূপণ করছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে জানা যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। তখন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুক্রবার দিন বেলা ৩টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল রুটে এবং বেলা ৩টা ৫০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর রুটে ১২ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন চলবে। সেপ্টেম্বরের ১৮ দিনে যাত্রী পরিবহন হয়েছে ৪৯ লাখ এবং আয় হয়েছে ২০ কোটি ৬৭ লাখের কিছু বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোরেল পথের ভায়াডাক্টে বুধবারের বিয়ারিং প্যাডের সমস্যা নিয়েও কথা বলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির কারণ অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ডিএমটিসিএল, প্রকল্প এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কারিগরি ত্রুটির ধরন সম্পর্কে বলা হয়, বিজয় সরণি এবং ফার্মগেট স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে একটি পিয়ার এবং তার ওপরের ভায়াডাক্টের মাঝের ‘ইলাস্টোমেরিক’ বিয়ারিং প্যাড স্থানচ্যুত হয়েছিল। উল্লেখ্য, এ কারণে বুধবার ১১ ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
বছর কয়েক আগে মেট্রোরেলের উড়ালপথ নির্মাণকাজ চলার সময় এর একাংশে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা তখন বলেছিলেন, অভিযোগ ওঠায় প্যাডগুলো বদলে ফেলা হয়েছিল।
বুধবারের বিয়ারিং প্যাডের ঘটনার সূত্রে বিশেষজ্ঞরা নকশাগত ত্রুটির কথাও বলেছেন। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রউফ গতকাল বলেন, বিয়ারিং প্যাড নিম্নমানের ছিল না। নকশাগত কোনো ত্রুটিও নেই।