হোম > ছাপা সংস্করণ

যশোরে প্রতারণা: ‘ওরা সব টাকা তুলে নেছে, এখন খাব কী’

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের মনিরামপুরের পলাশী গ্রামের তাসলিমা বেগম। অভাবের তাড়নায় রোদে পুড়ে ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজের শ্রমিক হয়ে মাটি কাটার কাজ করেছেন। আশা ছিল, মজুরির টাকা পেয়ে খাবার কিনবেন, ঈদে কিনবেন ছেলের জন্য নতুন জামা। কাজের মজুরি ৬ হাজার ৪০ টাকা নগদ অ্যাকাউন্টে ঢোকার খবরে গত রোববার বিকেলে ছুটে যান স্থানীয় বাজারে এজেন্টের দোকানে। সেখানে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। দোকানি জানিয়েছেন, টাকা ঢোকার পরপরই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

নগদ অ্যাকাউন্টের টাকা অন্য কেউ তুলে নেওয়ার এ খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাসলিমা। তিনি গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টাকা না পেয়ে তিন দিন পথে পথে কাইন্দে বেড়াইছি। ঘরে চাল নাই। খাব কী? ঈদে ছেলের জামা কিনতি চাইছি। সেমাই-চিনি কেনার টাকা ছিল না। মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গিছি, কেউ কিছু করতি পারল না।’

তাসলিমা বেগম আরও বলেন, ‘কাজের টাকা দুই কিস্তিতে দেছে। প্রথমবার আট হাজার টাকা তুলে আনার পর একবার অফিসতে ফোন দিয়ে টাকার কথা জানতি চাইল। সেবার তুলে নিলাম বলে ওরা আর নিতি পারেনি।’

শুধু তাসলিমা বেগমের নয়, তাঁর সঙ্গের শ্রমিক বাসুদেবপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের এক কিস্তির ৬ হাজার ৪০, সোনাভান বেগমের ৮ হাজার ৫৬, সাহেব আলীর ৬ হাজার ৪০ এবং এড়েন্দা গ্রামের অনিকা দাসের ৮ হাজার ৫৬ টাকা তুলে নিয়েছে চক্রটি। তাঁদের সবার কাছে পিআইও দপ্তরের পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে কল করা হয়েছে। করোনার টিকা দেওয়ার কারণে বোনাস হিসেবে আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে তাঁদের অনটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) এবং পরে নগদের পিন নম্বর জানতে চাওয়া হয়েছে। বোনাস পাওয়ার আশায় সরল বিশ্বাসে তাঁরা চক্রের ফাঁদে পড়েন।

বাসুদেবপুর গ্রামের সোনাভান বেগম বলেন, ‘ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নাই। মাটি কাটার কাজের টাকায় কষ্টে সংসার চলে। করোনার টিকার সব ডোজ নেওয়ায় আড়াই হাজার টাকা বোনাস দেবে বলে ওরা প্রথম কিস্তির আট হাজার টাকা তুলে নেছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করিছি। টাকা ফেরত পাইনি।’ 

রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জামাল হোসেন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে যে চারজনের টাকা নিয়েছে, তাঁরা খুবই গরিব। এ টাকার ওপর তাঁদের সংসার চলে। টাকা হারিয়ে তাঁরা দিশেহারা হয়ে গেছে।’

রোহিতা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, ‘তিনজনের টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়ে খেদাপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করিয়েছি। আবার সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলেও পাঠিয়েছি। এখনো কোনো ফিডব্যাক পাইনি।’

এদিকে হরিহরনগর ইউনিয়নের ১৬-২০ জন এবং খেদাপাড়া ইউনিয়নের গালদা গ্রামের কর্মসূচির এক শ্রমিকের মজুরিও প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

মনিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার কর্মসূচির শ্রমিকদের কাজের বিষয়টি দেখভাল করেন। তিনি বলেন, ‘এবার ৩৬ দিন কাজ হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে শ্রমিকদের নগদ অ্যাকাউন্টে ২০ দিনের মজুরি ৮ হাজার টাকা এবং পরে ১৬ দিনের মজুরি ৬ হাজার টাকা ঢুকেছে। পুরো বিষয়টি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের ঢাকা প্রধান দপ্তর দেখভাল করে। আমরা শুধু বিল প্রস্তুত করে পাঠাই।’

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত একটা অভিযোগ পেয়ে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলে পাঠিয়ে দিয়েছি।’ 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘হরিহরনগর ইউনিয়ন থেকে ১৩-১৪ জন শ্রমিক আমার কাছে এসে টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি তাঁদের থানায় মামলা করতে বলেছি। আমরা মামলাগুলো পিবিআই অথবা সাইবার ক্রাইম দমন সেলে পাঠাব। টাকা পাওয়া যাবে। একটু দেরি হবে।’ 

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন