চুয়াডাঙ্গায় সড়কের ওপর থাকা বিভিন্ন রেলগেটের যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। এর মধ্যে শহরের চুয়াডাঙ্গা রেলগেট নামে পরিচিত গেটে যানজটের সমস্যা তীব্র। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দ্রুত উড়াল সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা হোক। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন বলছে, ধীর গতিতে এগোলেও সামনের একনেকে সভায় অনুমোদন হতে পারে উড়াল সড়কের।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ১১ জোড়া যাত্রীবাহী ও ৮ থেকে ১০ জোড়া মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেন খুলনা থেকে ঢাকা, রাজশাহী, সৈয়দপুর, গোয়ালন্দ ও পার্বতীপুর-চাঁপাইনবাবগঞ্জ পথে এবং মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা-কলকাতা পথে চলাচল করে। এসব ট্রেন নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য দৈনিক ৩৮ থেকে ৪৪ বার রেলগেট বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিবার গড়ে ২০ মিনিট বন্ধ রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় ছোট বড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি রেলগেট থাকলেও মূলত জেলার তিনটি রেলগেটে তীব্র যানজটের সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে জেলা শহরের প্রধান সড়কের চুয়াডাঙ্গা রেলগেটে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এই সড়কটি চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে যাতায়াতের প্রধান সড়ক। চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ অতিক্রম করে ঢাকা, যশোর-খুলনা ও কুষ্টিয়া রুটে শত শত গাড়ি চলাচল করে থাকে। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের অন্য পাশে আছে বেলগাছি রেলগেট। ওই সড়কটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করে চুয়াডাঙ্গা শহরে আসে। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের মুন্সিগঞ্জে রয়েছে আরও একটি রেলগেট। সেখানেও তীব্র যানজট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রেন অতিক্রমের সময় গেট নামানো হলে সড়কগুলোতে দেখা দেয় তীব্র যানজট। প্রতিবার গেট নামানোর পর ১৫ থেকে ২৫ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে রেলগেটে যানজট তৈরি হয়। তাই চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া রুটে চলাচলকারী সব যানবাহন আটকে যায়। এ চার জেলার যানবাহন ছাড়াও ঢাকা, খুলনা ও বরিশালের দিক থেকে আসা যানবাহনগুলোও এ যানজটে আটকে পড়ে। এ গেটটির ঠিক পাশ দিয়ে একটি ছোট্ট আন্ডারপাস থাকলেও তা অনেক পুরোনো। আন্ডারপাসে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। বড় গাড়ি এ আন্ডারপাস দিয়ে যাওয়া-আসা করতে পারে না। ইজিবাইক বা মোটরসাইকেল চলাচল করলেও কাঁদা পানিতে সেটাও হয়ে ওঠে কষ্টকর।
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের মাস্টার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য নিয়ম মেনে গেট নামানো হয়। কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। কখনো কখনো দুই দিক থেকে একসঙ্গে ট্রেন চলে আসে। এমন ঘটনা সকালের দিকে প্রায়ই ঘটে। তখন একটু বেশি সময় গেট নামানো থাকে। ওই সময় সড়কেও যানবাহন থাকে বেশি।’
প্রাইভেটকারচালক সাইদুল হক বলেন, ছোট শহর। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে সর্বোচ্চ পনেরো মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু মাঝখানে এক রেল গেট পেরোতেই আধা ঘণ্টা লাগে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘এখানে রেলের ওভারপাস করার জন্য একটি প্রস্তাব একনেকে গেছে। তবে উচ্চতার কারণে একবার একনেক থেকে ফেরত আসছে। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে সেই উচ্চতা সংশোধন করে আবার পাঠিয়েছে। সম্ভবত আগামী একনেক মিটিংয়ে এটি উঠবে। হয়তো একটু সময় লাগবে, তবে আমি আশা করি হয়ে যাবে।’