ছাদবাগানে ফুটে আছে থরে থরে জবা ফুল। প্রতিটির রং আর ধরন আলাদা। পাপড়ি ও বৃন্তের বিন্যাসও ভিন্ন। এর কোনোটি টকটকে লাল, কোনোটি গোলাপি-সাদা, কোনোটি আবার হলুদ-সাদার মিশ্রণ তো কোনোটি হালকা বেগুনি রঙের। আবার কোনোটিতে হলুদ-গোলাপি ও লালের মিশ্রণ। এগুলোর বেশির ভাগে পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও কোনো কোনোটির পাপড়ির সংখ্যা বেশি। ফলে দেখতে সাধারণ জবার মতো নয়। এত রং ও বৈচিত্র্যের জবা ফুল আপনি হয়তো একসঙ্গে দেখেননি আগে!
ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জায়গা এবং বিদেশ থেকে এনে ২৩৫ প্রজাতির জবাগাছ রোপণ করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন অধ্যাপক ড. শাহানারা বেগম। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন। প্রতিদিনই তাঁর ছাদবাগানে বাহারি রঙের সেসব ফুল ফুটছে।
জবা ফুলের ইংরেজি নাম রোসা সিনেন্সিস। এর অর্থ চীন দেশের গোলাপ। জবা ফুলের সঙ্গে গোলাপের সম্পর্ক নামেই মাত্র। এতে গোলাপের মতো সৌরভ না থাকলেও আছে রঙের বৈচিত্র্য। সে কারণেই হয়তো হঠাৎ করে ফুলটির প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল ড. শাহানারা বেগমের। দু-একটি প্রজাতির কথা জানলেও ফুলটির যে দুই শর বেশি প্রজাতি আছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না তাঁর। ‘এসো বাগান করি’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে তিনি প্রথম জবার বৈচিত্র্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। ফেসবুক গ্রুপটিতে বিভিন্ন মানুষের আপলোড করা ফুলটির বিচিত্র রং ও ধরন ভালো লাগতে শুরু করে তাঁর। এরপর নিজের উদ্যোগে করোনাকালে জনপ্রিয় প্রজাতির জবা ফুলের চারা দিয়ে বাগান করা শুরু করেন। করোনা পরিস্থিতি শেষ হলে ফুলটির নতুন নতুন প্রজাতি সংগৃহীত হতে থাকে। প্রথমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশপাশের নার্সারি থেকে জবার প্রজাতি সংগ্রহ শুরু হয়। ময়মনসিংহের অন্যান্য নার্সারি থেকেও কিছু প্রজাতি সংগ্রহ করেন ড. শাহানারা। এরপর ধীরে ধীরে পুরো বাংলাদেশ থেকে ফুলটির বিভিন্ন প্রজাতির চারা সংগ্রহ করেন। এখনো ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে তিনি জবার বিভিন্ন প্রজাতির চারা সংগ্রহ করে চলেছেন। এর বৈচিত্র্যময় প্রজাতি সংগ্রহে শাহানারা বেগমকে তাঁর স্বামী অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলামও সহায়তা করেন। বিদেশে গেলেও খুঁজে আনেন জবার নতুন প্রজাতি!
জবা এক দিনের ফুল। সকালে ফুটলে বিকেলে চুপসে যায়। তারপর ঝরে পড়ে। আবার সব ফুল একসঙ্গে ফোটেও না। একেক দিন একেক প্রজাতির ফুল ফোটে শাহানারা বেগমের বাগানে। এই বৈচিত্র্যই বাগানটি অনন্য করে তুলেছে। আবহাওয়ার তারতম্যের ওপর এ ফুল ফোটার হার নির্ভর করে অনেকাংশে। অতিবৃষ্টি ও শীতল বৃষ্টির সময় ফুল ফোটার সংখ্যা কমে যায়।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নতুন ফুল দেখার অপেক্ষায় থাকেন ড. শাহানারা বেগম। একেক দিন একেক ধরনের ফুল ফুটতে দেখেন। প্রশান্তিতে ছেয়ে যায় তাঁর মন। অবসর সময়ে ফুলগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন তিনি। প্রতিদিন সকাল-বিকেল ফুল ও গাছের পেছনে ব্যয় করেন বেশ কিছুটা সময়। ড. শাহানারা জানিয়েছেন, বাগানটি তাঁর অবসরের শান্তির জায়গা। যত দিন সুস্থ থাকবেন, তত দিন আরও অনেক প্রজাতির জবা ফুলের চারা সংগ্রহ করতে থাকবেন তিনি।
মো. আমান উল্লাহ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়