ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগর ও নদ-নদীতে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে যেতে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে জেলেরা প্রস্তুতি শেষ করছেন। ইতিমধ্যে জেলার ছোট-বড় প্রায় সাত হাজার মাছ ধরার ট্রলার প্রস্তুত করা হয়েছে।
এক সপ্তাহ ধরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল ছিল। গত মঙ্গলবার জেলার উপকূলীয় এলাকায় বয়ে যাওয়া সিত্রাংয়ের কারণে জলোচ্ছ্বাস ও ঝোড়ো হাওয়ায় অধিকাংশ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উপকূলের লক্ষাধিক জেলে সাগরে রওনা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ঘাটে জড়ো হচ্ছেন।
কক্সবাজার শহর থেকে মেরিনড্রাইভ সড়ক ধরে ৫০ কিলোমিটার দূরে টেকনাফের শামলাপুর ঘাট। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা কেউ নৌকায় জাল তুলছেন, কেউ নৌকায় ত্রুটি সেরে নিচ্ছেন। কেউ নৌকায় রঙের কাজ সারছেন। ঘাট এবং আশপাশের কয়েক শ নৌকায় চলছে ভীষণ ব্যস্ততা। কারও কথা বলার ফুরসত নেই।
একটি নৌকার মালিক নুরুল আজিম বলেন, ‘এ বছর বর্ষাকালে তেমন বৃষ্টি হয়নি। দফায় দফায় সাগরে নিম্নচাপ ও লঘুচাপ লেগেই ছিল। এতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আরও অন্তত দেড় মাস সাগরে যাওয়া যায়নি।’
আবদুল হাকিম দীর্ঘদিন সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পর সাগর শান্ত হয়ে এসেছে। এবারের যাত্রায় ভালো ইলিশ ও অন্যান্য মাছ ধরা পড়বে বলে আশা করছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফের উপকূলীয় ঘাটগুলোতে জেলেরা সাগরে যাওয়ার জন্য খাদ্যসহ নানা সরঞ্জাম নিয়ে জড়ো হচ্ছেন। কোনো ট্রলার এক সপ্তাহ, কোনোটি দুই সপ্তাহ এবং ছোট নৌযান তিন দিনের প্রস্তুতিতে সাগরে যাবে।
জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষে ছোট-বড় সাত হাজার নৌযান প্রস্তুত রয়েছে। বেশির ভাগ ট্রলারে জাল, বরফ ও অন্যান্য মালপত্র তুলছেন জেলেরা।’
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জেলায় ১ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে ২৬৮ মেট্রিক টন, আগস্টে ৭৪৮ মেট্রিক টন ও সেপ্টেম্বরে ৯২২ মেট্রিক টন। ধরা পড়া ৮০ শতাংশ ইলিশের ওজন ছিল ৫০০-৭০০ গ্রাম। জেলায় মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৬৩ হাজার ১৯৩ জন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত অর্থবছরে জেলায় ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৪০ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন। এ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
মোহাম্মদ বদরুজ্জামান আরও বলেন, বৃষ্টি কম হওয়ায় গভীর সাগর থেকে উপকূলের নদীর মোহনায় ইলিশ কম এসেছে। এ ছাড়া ঘনঘন বৈরি আবহাওয়ার প্রভাবও ছিল।
এবারের নিষেধাজ্ঞার ফলে আশা করি জেলেদের জালে ভালো পরিমাণের ইলিশ ধরা পড়বে।