লোকে বলে, অশ্রু শুকিয়ে যায়, ম্লান হয়ে যায় হাসি কিন্তু স্মৃতি তো স্থায়ী হয়। নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমের মৃত্যুর পর দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেল। তবু স্মৃতি হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর প্রিয়জনেরা। বুকের গহিন থেকে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসছে কতশত কথা। ‘এই তো সেদিন, নাঈম শান্ত হয়ে ক্লাস করছিল। মনোযোগ দিয়ে শুনছিল আমার কথা। ও খুব মনোযোগী ছিল।’ নটর ডেমের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা মাফরুখা অশ্রু এভাবে বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন।
গত ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে রাস্তা পারাপারের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান (১৮) মারা যান। এরপর হাফ পাসের দাবির সঙ্গে যোগ হয় পুরোনো দাবি। নিরাপদ সড়ক চায় শিক্ষার্থীরা। এরপর বাসচাপায় নিহত হয় আরও একজন শিক্ষার্থী। গত সোমবার রাতে রামপুরায় রাস্তা পার হওয়ার সময় প্রাণ যায় মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের। এর মধ্যে নাঈমের প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক।
আজকের পত্রিকাকে নটর ডেমের শিক্ষিকা মাফরুখা অশ্রু বলেন, ‘আমি ছাত্রদের ইংলিশ ফর টুডে বইটি নিয়ে আসতে বাধ্য করতাম। তারপরও অনেক শিক্ষার্থী নিয়ে আসত না। কিন্তু নাঈম আমার কথা শুনত। এমনকি মর্গে গিয়ে দেখি, নাঈমের বাবার পাশে সেই বইটি পড়ে আছে, যা মৃত্যুর আগপর্যন্ত নাঈমের কাছেই ছিল। কলেজের ফাদার মার্টিন ভবনের দোতলায় ক্লাস করতে নাঈম আর কোনোদিনই আসবে না, এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’
এই শিক্ষিকা জানান, নাঈমদের ব্যাচ খুব অল্প সময় একসঙ্গে ক্লাস করতে পেরেছে। গত অক্টোবর মাস থেকে ওদের ক্লাস শুরু হয়। এর মধ্যেই নাঈম চলে গেল। নটের ডেম কলেজের প্রধান শিক্ষক (ফাদার) হেমন্ত পিউস রোজারিও আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনার কারণে এই ব্যাচের সঙ্গে সব শিক্ষকের দেখা-সাক্ষাৎও কম হয়েছে। তবে অল্পদিনে যা জেনেছি, তাতে এটা বলতে পারি, ও খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল। আইনজীবী হতে চেয়েছিল নাঈম।’
নটর ডেম কলেজের ২০২২ ব্যাচের ছাত্র তাসনিম আহমেদ বলেন, ‘নাঈম ওর এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করত। কলেজ থেকে যাওয়ার পথে গুলিস্তানে গাড়িচাপায় মারা যায়। নাঈমের মতো আর কাউকে এভাবে হারাতে চাই না।’ নাঈমের বাবা শাহ আলম বলেন, ‘জুতা-মোজা আর মাস্ক নিয়ে সেই যে আমার ছেলেটা গেল। আর তো ফিরে এল না!’