‘সংস্কৃতির সংকট: রুচির দুর্ভিক্ষ’ কাটাতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার আহ্বান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ৫৮

এই সময়ে সংস্কৃতির বড় সংকট রুচির দুর্ভিক্ষ, আর সেই দুর্ভিক্ষ কাটাতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন টেলিভিশন মিডিয়ার নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীরা। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘সংস্কৃতির সংকট: রুচির দুর্ভিক্ষ’ শিরোনামে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে এফটিপিও (ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন)। সেখানেই এমন মতামত ব্যক্ত করেন উপস্থিত শিল্পী ও নির্মাতারা।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেছিলেন, ‘আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান।’ এমন মন্তব্যের পর প্রতিবাদ জানিয়ে আত্মাহূতির কথা বলেন হিরো আলম। বিতর্কের ঝড় ওঠে মিডিয়ায়। সেই আলোচনা-সমালোচনার জের ধরেই গতকাল এফটিপিও আয়োজন করে এই মুক্ত আলোচনার।
অনুষ্ঠান শুরু করেন অভিনেতা সাজু খাদেম। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ও নাট্যকার হারুন-অর-রশিদ। সভাপতিত্ব করেন অভিনেতা ও পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু। অনুষ্ঠানের শুরুতে এফটিপিওর পক্ষে লিখিত প্রবন্ধ তুলে ধরেন অভিনেতা ও অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম।

অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ তাঁর আলোচনায় বলেন, ‘সব মিলিয়ে এখন সময়টা বড় কঠিন। এই কঠিন সময়ে সত্যকে বুকে নিয়েই মন্দটার মোকাবিলা করতে হবে।’
নির্মাতা ও অভিনেতা গাজী রাকায়েত বলেন, ‘আলোচনায় রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা খুব জরুরি ছিল। কেননা, এসব সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে।’

নির্মাতা এস এ হক অলীক বলেন, ‘বিনোদন, সংস্কৃতিসহ দেশের নানা অঙ্গনের কর্মকাণ্ডেই রুচির দুর্ভিক্ষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব সংকট কাটাতে সরকারের পাশাপাশি মিডিয়াসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তির সম্পৃক্ততা না বাড়ালে এ ধরনের সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন।’

অভিনেতা ইরেশ যাকের বলেন, ‘দেশে হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গুলশান-বনানীর মতো এলাকায় একটা ভালো লাইব্রেরি নেই, থিয়েটার নেই, সিনেমা হল নেই। এই এলাকার মানুষের সাংস্কৃতিক রুচিবোধ সমৃদ্ধ হবে কী করে? এসব সমাধানে আলোচনার চেয়ে কাজটা করা জরুরি এবং সেটা সবাই মিলেই করতে হবে।’

অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছু কিছু মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে আমি সন্দিহান।’ কতিপয় নির্মাতা ও শিল্পী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কুরুচির লালনপালন অনেক সময় রুচিবানেরাও করে থাকেন। তাই সংকট কাটাতে নিজেদের সচেতন হতে হবে আগে।’

অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন অভিনেত্রী ও নির্দেশক আফসানা মিমি, নির্মাতা শিমুল সরকার, নাট্যকার বৃন্দাবন দাস প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, অভিনেতা ও শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান, ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর, অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু, শাহনাজ খুশি, সুজাত শিমুল প্রমুখ।