নাফ নদী পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে আসছে মাদক। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে প্রায় তিন কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী পার হলেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। ওখান থেকে আসছে ইয়াবা, আইস, হেরোইনের মতো মাদক।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এই মাদক বিক্রি করছে কম দামে। বাংলাদেশের মাদক কারবারিরা তাতে হয়ে উঠেছে সক্রিয়। কম দামে মাদক কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারলে যে লাভ হবে, তাতে অনেকেই বনে যেতে পারবে মাদকসম্রাট। খবরটি খুবই উদ্বেগজনক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ে যাঁরা একটু খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের জানা আছে, কোনো দেশে সহিংস অস্থিরতা চললে, সেখানে স্মল আর্মস বিক্রি, মাদক চোরাচালান ও নারী পাচারের ঘটনাগুলো বেড়ে যায়। মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের লড়াই চালানোর জন্য অস্ত্র দরকার।অস্ত্র সংগ্রহের জন্য অর্থ দরকার। সেই অর্থ পাওয়ার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো মাদক চোরাচালান। সে কাজটিই করে চলেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা।
মাদক প্রতিরোধের কাজটি খুব সহজ নয়। প্রথমত, যে বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা, তার সর্বত্র নজরদারি করা কঠিন। মাদক কারবারে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের আঁতাত হওয়ায় তারা সুকৌশলে নিজেদের কার্যক্রম গোপনে চালাতে পারছে। এই বিশাল অপকর্মযজ্ঞ নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট নয়। যেহেতু বিশাল এক মাদক সিন্ডিকেট নিয়ে কথা হচ্ছে, তাই পুলিশের সঙ্গে অন্য আরও বাহিনীর যুক্ততা দরকার। যৌথ বাহিনীর তৎপরতা এই মাদক কারবারে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
সমস্যা আরও আছে। যেহেতু বিশাল অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয় এই কাজে, সেহেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো অংশের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে আপসরফা করতে চাইতে পারে এই সিন্ডিকেট। তাদের মাদক চোরাচালান তৎপরতার কথা কেউ জানবে না, এ রকম একটা নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা থাকতে পারে তাদের। এই সবকিছু ভেবেই মাদকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
আমাদের পুলিশ বিভাগে মাদক চোরাকারবারিদের তালিকা রয়েছে। সেই তালিকায় মাঝে মাঝে যোজন-বিয়োজন হয়। সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে চোরাচালানের যে প্রবণতা আছে, তার সঙ্গে কারা যুক্ত থাকে, তারও অনেক কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে চোরাকারবারিদের অপতৎপরতা কখনো কখনো দৃষ্টির অগোচরে থেকে যায়।
সীমান্তে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে এখানে বিকল্প কর্মক্ষেত্র তৈরি করার প্রসঙ্গই আসা উচিত সর্বাগ্রে। মনে রাখা দরকার, দেয়ালে যাদের পিঠ ঠেকে যায়, তারা যেকোনো কিছু করার জন্য প্রস্তুত থাকে। সেই সঙ্গে লোভ যুক্ত হলে তো সোনায় সোহাগা।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশে মাদকের আগ্রাসন রোধকল্পে গঠিত স্ট্র্যাটেজিক কমিটির তৃতীয় সভায় মাদক বিষয়ে অনেক আলোচনাই হয়েছে। এখন প্রয়োজন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া। মাদক চোরাচালানে প্রচুর মুনাফা হয় বলে এই ব্যবসার প্রতি সহজেই প্রলুব্ধ হয় তারা, যারা মুহূর্তে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কথা ভাবে। এই কলাগাছগুলোকেই সমূলে উৎপাটন করা প্রয়োজন।