বদরগঞ্জের রাধানগর ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি থেকে বসে বসে টাকা নেওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশ অবশেষে কাজে ফিরেছেন। কেউ কেউ বদলি লোক দিয়ে কাজ করে দিচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেসহ ২৫ শ্রমিক কর্মসৃজনে কাজ না করে প্রভাব খাটাতেন। তাঁরা বাড়িতে বসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের মজুরির ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও তাঁরা মাটি কাটার কাজে যাননি। এ নিয়ে গত শুক্রবার আজকের পত্রিকায় ‘কর্মসৃজনে কাজ না করে টাকা উত্তোলন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে টনক নড়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের।
কাজ তদারকি করা সর্দারেরা জানান, গত শনিবার কর্মসৃজনে মাটি কাটতে যান প্রভাবশালী শ্রমিকেরা। কয়েকজন না আসলেও তাঁরা বদলি লোক পাঠিয়েছেন। তবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সর্দার আব্দুল মতিন বলেন, ‘খালেদা নামের এক শ্রমিক এখনো প্রভাব খাটাচ্ছেন। শনিবার সবাই কাজে আসলেও তিনি আসেননি। রোববার তিনি প্রকল্পে দুই ঘণ্টা অবস্থান করে আমাকে না বলে বাড়িতে চলে যান। এক প্রভাবশালী নেতার খালা হওয়ায় প্রভাব খাটাচ্ছেন তিনি।’
রাধানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছ শনিবার তাঁর কলেজ পড়ুয়া ছেলে কামরুজ্জামানের পরিবর্তে মাটি কাটার কাজে যান। সেই সঙ্গে মাটি কেটেছেন গ্রাম পুলিশ সদস্য নুর মোহাম্মদ বাদশা, ইউপি চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই একরামুল হক, ভাগনে আতিকুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলামও। তবে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা জয়া তাঁর পরিবর্তে আমেনা খাতুন নামের আরেক নারীশ্রমিককে কাজে পাঠান বলে জানান সর্দার মোতালেব।
মোতালেব বলেন, ‘এর আগে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রভাবে কোনো দিন একরামুল ও জয়া কাজে আসেননি। তাঁদের পরিবর্তেও কেউ কাজ করেননি। বাড়িতে বসে তাঁরা টাকা তুলছিলেন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর একরামুল কাজে এসেছেন। উদ্যোক্তা জয়া লজ্জায় না আসলেও তাঁর পরিবর্তে একজন নারীকে পাঠিয়েছেন।’
এ ছাড়া মাটি কাটতে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লোকমান খানের ছেলে সোহেল রানা, সাবেক ইউপি সদস্য রাইতুল হকের স্ত্রী জান্নাতি আসেন বলে সর্দার আব্দুল মতিন জানিয়েছেন। আর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা খাতুনের পরিবর্তে কাজ করছেন আবুল কাশেম।
ছেলের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের নেতা আনিছ মাটি কাটার কাজে কোদাল ধরেছেন। শনিবার এমন ছবি তিনি নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন। তিনি বলেন, ‘কর্মসৃজনে আমার ছেলের নাম ছিল তা আগে জানতাম না। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জানতে পারি। ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক সদয় হয়ে আমার ছেলের নামটি দিয়েছেন। কিন্তু আমার ছেলে রংপুরের একটি কলেজে অধ্যয়নরত। সে তো মাটি কাটতে আসতে পারবে না। তার পরিবর্তে নিজে মাটি কাটার কাজ করছি।’
গত শনিবার কাজ পরিদর্শনে যান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এখন সবাই মাটি কাটছেন। যাঁরা আসছেন না, হাজিরা খাতায় তাঁদের অনুপস্থিত দেখানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গতকাল রোববার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বাবুল চন্দ্র রায় বলেন, ‘যাঁরা এত দিন কর্মসৃজনে কাজ না করে টাকা তুলেছেন, তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’