নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা হয়েছিল বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায়। তবে বিশ্বজিৎ হত্যার ৯ বছর, রায়ের ৮ বছর পরও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার মেলেনি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলছে মামলাটি। রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল শুনানিও শুরু হয়নি। চার বছর ধরে মামলাটি এই অবস্থায়ই আছে। যদিও ওই হত্যাকাণ্ডের ১ বছর ৯ দিনের মাথায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলার ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
বিশ্বজিতের ভাই উত্তর কুমার দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ভাই নির্মমভাবে খুন হয়েছে। সেই খুনের বিচার জীবিত অবস্থায় বাবা-মা দেখে যেতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। আমরা খুব হতাশ। উচ্চ আদালতে কয়েকজনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবনও করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু বিচার ও রায় দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।’
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, পেপারবুক তৈরি না হওয়ায় শুনানি করা যাচ্ছে না। আপিল বিভাগে শুনানির ক্ষেত্রে আবেদনকারীকেই পেপারবুক তৈরি করে জমা দিতে হয়। আর আসামিরা চাইছেন না বিষয়টি নিষ্পত্তি হোক। এ কারণে দেরি হচ্ছে।
সর্বশেষ চলতি বছরের আগস্টে আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইমরান হোসেনকে (৩২) ফরিদপুরের সদরপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রায়ের দিন মামলার আট আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। বাকি আসামিরা পলাতক ছিলেন। ওই মামলার ১৫ নম্বর আসামি ছিলেন ইমরান।
বিশ্বজিৎ ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দিনদুপুরে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। ঢাকার শাঁখারীবাজারে বড় ভাইয়ের দোকানে দরজির কাজ করতেন তিনি। ওই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ রায় দেন। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আটজনের মধ্যে দুজনের দণ্ড বহাল রাখেন। চারজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও দুজনকে খালাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আপিলকারী দুজনকে খালাস দেওয়া হয়। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। আপিল বিভাগে সাজা বহাল থাকলে আসামিরা রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পাবেন। রিভিউ খারিজ হলে সবশেষ ধাপ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ থাকবে। রাষ্ট্রপতি সে আবেদন খারিজ করার পরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে সরকার।