ঠিক বছরখানেক আগে এক বিকেলে বারান্দায় চা খেতে খেতে ছেলেকে বলেছিলেন, ‘খোকা, তুই এবারও অলিম্পিয়াডে যাবি।’ গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের সেই স্বপ্ন ছেলে তাহসিন তাজওয়ার বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বাবা আর দেখে যেতে পারেননি।
গত ৫ জুলাই এক অচেনা দুপুরে দাবা খেলতে খেলতেই অজানা এক দিগন্তের পথে পাড়ি জমান জিয়া। যেখান থেকে আর কারও ফেরার সাধ্য নেই। এবার বাবাকে ছাড়া অলিম্পিয়াডের মঞ্চে তাহসিনের আলো ছড়ানোর পালা।
১০ সেপ্টেম্বর হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বসবে এই প্রতিযোগিতার ৪৫ তম আসর। সেখানে অংশ নিতে যাওয়ার আগে গতকাল আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেন তাহসিন। বাবার কথা বলতেই গলাটা যেন ধরে আসে তাঁর, ‘এই শূন্যতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ২০২২ সালে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। কখনো কল্পনাও করিনি যে ওটাই আমাদের প্রথম এবং শেষ অলিম্পিয়াড হবে। কী বলব...! আমি চেষ্টা করব আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য দারুণ কিছু বয়ে আনতে।’
এটাই জীবন, এটাই নিয়ম। যে জীবন সাজে শত স্বপ্ন নিয়ে, প্রিয়জনের ভালোবাসার আলো দিয়ে। সেই জীবনই একটা সময় থমকে যায়। সব ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে যেতে হয় অসীম শূন্যতায়। তবে এই হারিয়ে যাওয়াই শেষ নয়। যিনি হারিয়ে যান, তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতি আঁকড়ে তাঁরই প্রিয়মুখগুলো চালিয়ে যান জীবনযুদ্ধ। তাহসিনও তা-ই করছেন। বাবার রেখে যাওয়া কাজ, দেখানো পথ ধরে দেশের হয়ে সাফল্য আনাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
গতকাল দাবা ফেডারেশনের কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও ছিল জিয়াকে হারানোর শোক। সাংবাদিক ও ফেডারেশনের কর্তারা স্মরণ করেন প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টারকে। ২০২২ সালে চেন্নাইয়ে বাবা-ছেলের জুটি অংশ নিয়েছিল অলিম্পিয়াডে। এবার তাহসিন অলিম্পিয়াডে যাচ্ছেন ঠিকই, শুধু নেই তাঁর বাবা।
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে শুরু হতে যাওয়া এই আসরে বাংলাদেশ থেকে তাহসিন ছাড়াও অংশ নেবেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজিব, গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, আন্তর্জাতিক মাস্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান, ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড়, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ, মহিলা ফিদে মাস্টার নোশিন আঞ্জুম, মহিলা ফিদে মাস্টার ওয়াদিফা আহমেদ, মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার নুশরাত জাহান আলো ও মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার ওয়ালিজা আহমেদ।
দাবা অলিম্পিয়াড শেষে মনন রেজা নীড়, ফাহাদ রহমান, তাহসিন তাজওয়ার জিয়া, ওয়াদিফা ও ওয়ালিজা বুদাপেস্টেই আরও দুটি টুর্নামেন্টে অংশ নেবেন। টুর্নামেন্টগুলোতে নর্মের আশা রয়েছে তাঁদের।