রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এসে দিশেহারা ক্রেতারা। তবে বেগুন ও মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় উপজেলার চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসি।
চাষিরা বলছেন, এই উপজেলার মরিচ ও বেগুনখেতগুলো উঁচু থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ফলে তাঁরা এখন লাভের মুখ দেখছেন।
এদিকে দাম বাড়ায় চাষিরা খুশি হলেও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য তা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাঁচা মরিচের কাছেও যেতে পারছেন না। বেগুনও কম বিক্রি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা বাজার নজরদারির জন্য প্রশাসনের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চারঘাটে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধানের আবাদ ছেড়ে অনেকেই সবজি চাষে ঝুঁকেছেন। এই মৌসুমে কাঁচা মরিচ, বেগুন ও পটোল চাষ করেছেন অনেকে। উপজেলাজুড়ে প্রায় ২৭৮ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উন্নত চাষ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী খেত করা হচ্ছে।
গত শনিবার সকালে উপজেলার সরদহ ও শিমুলিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভালো ফলন ও লাভের আশায় নিয়মিত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজিচাষিরা। বেগুন ও মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় তাঁরা খুশি বলে জানালেন।
উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক কলিম আলী বলেন, চলতি মৌসুমে ৩০ শতক জমিতে বেগুন চাষাবাদ করেছেন তিনি। বাজারে সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ২৫ টাকা কেজি (১ হাজার টাকা মণ) বিক্রি হতো। বর্তমানে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা কেজিতে (১ হাজার ৮০০ টাকা মণ) বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন তিনি।
একই এলাকার মরিচচাষি মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানকার জমি উঁচু। সহজে পানি ওঠে না। ফলে এ মৌসুমে এখানকার অনেকেই মরিচ চাষ করেন। আমিও ২০ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছি। পাইকারি ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ভালো দাম পাচ্ছি। এর আগে কখনো মরিচের এত দাম পাইনি।’
গত শনিবার উপজেলা সদরের সাপ্তাহিক সবজি হাট ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ ২৪০-২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার হাটবাজারগুলোতে বেগুন-মরিচসহ প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে।
উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা ওবাইদুর রহমান জানান, প্রতিটি সবজির দাম চড়া। খুশিমতো দাম বাড়ানো হচ্ছে। বাজার তদারক করা দরকার।
পৌর সবজি বাজারের বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচের সংকট রয়েছে। বর্তমানে কাঁচা মরিচ কেজি ২২০ টাকা দরে মোকাম থেকে কিনতে হচ্ছে। বেশি দামে আনলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। অন্য সবজির দামও বেড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানান, মরিচের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র সারা দেশে একই। বেগুনসহ অন্য সবজির দামও বেশি। তবে উপজেলায় এ মৌসুমে সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকেরা। কৃষি অফিস তাঁদের সর্বদা সহায়তা করে যাচ্ছে।