গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশু শিক্ষায় বাধা দারিদ্র। এ কারণে বংশপরম্পরায় শিশুরা যুক্ত হচ্ছে কৃষি ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়। এতে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিশু। ফলে শিক্ষিত হয়ে জীবন গড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থেকেই যাচ্ছে।
উপজেলার সাপমারা, কামদিয়া, রাজাহার, শাখাহার ও দরবস্ত ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের ১৬ হাজার মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে শিশু রয়েছে অন্তত পক্ষে চার হাজার।
তবে এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পল্লিতে কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও পড়ালেখায় সম্পৃক্ত করতে অভিভাবকেরা খুব বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেননি। এ কারণে শিশুরা মা-বাবার সঙ্গে শিশুশ্রমে যুক্ত হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জে কামদিয়া ইউনিয়নের চানগুরা গ্রামের মালজি মার্ডি জানান, ‘পড়ালেখা করার মতো সামর্থ্য না থাকা সন্তানদের আয়মূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছি।’
জয়পুর গ্রামের মিনা হেমরম জানান, পড়ালেখা করানোর মতো পরিবেশ নেই। শিশুরা দেখে শেখে, কিন্তু শেখার পরিবেশ না থাকায় শিশুরাই বিদ্যালয়ে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। আবার অভিভাবকেরা এটি নিয়ে ভাবেন না বলে জানান তিনি।
জয়পুর গ্রামের মমতা মার্ডিও জানান, কৃষিকাজের সময় সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে সহায়তা হয়, এ কারণে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কম। আবার, তৃসনা মরমু, লক্ষ্মী কিসকু, শালমি মারডি মতো অনেক শিশু একটি সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তাদের পড়ালেখা করেই জীবন গড়ার স্বপ্ন রয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর নির্বাহী প্রধান এম আবদুস সালাম জানান, সব শিশুর সমান অধিকার নিয়ে বেড়ে ওঠার কথা থাকলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারের শিশুরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগ রয়েছে। অনেক পরিবারের শিশু পড়ালেখা করে সুন্দর জীবন গড়েছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী সরকার আজকের পত্রিকাকে জানান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল পরিবারের শিশুরা আমদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকে বার্ষিক উপবৃত্তি পায়। এ ছাড়া শিক্ষা উপকরণও দেওয়া হয়।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা আবু সাঈদ জানান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ এলাকা হিসেবে প্রতি বছর শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া সহনীয়ভাবে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমেও তাদের সহায়তা করা হয়।