পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের কৃষক আলমগীর গাজী (৫২)। নিজের জমি ছাড়াও অন্যের জমিতে চুক্তিতে পাওয়ার টিলার (ট্রাক্টর) দিয়ে চাষ করে থাকেন। হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আগের চুক্তিতে নেওয়া জমি চাষ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। একদিকে জমির মালিক চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না, অন্যদিকে দিতে হচ্ছে লোকসান। এমন পরিস্থিতিতে আলমগীর গাজী পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
আজকের পত্রিকাকে আলমগীর গাজী বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাসে জমি চাষের জন্য অগ্রিম ২ হাজার টাকা নিয়েছি, সেই সময়ে ডিজেলের দাম ছিল ৮০ টাকা। সেই খরচ হিসাব করে ৭ হাজার ৫০০ টাকায় এক কানি (৬০ কাঠা) জমি চাষের চুক্তি করেছি। এখন ডিজেলের দাম ১১৪ টাকা। এত অল্প সময়ে এত বেশি দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় ভুগছি। প্রায় ২০ কানি জমির চাষের জন্য অগ্রিম টাকা নিয়ে চুক্তি করেছি। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পরে এখন জমির মালিকেরা কোনো কথাই শুনছে না।’
জানা গেছে, এক সময় গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ করা হলেও সময়ের বিবর্তনে এখন ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করা হয়। এ সুবিধায় সারা বছরে জমিতে কোনো না কোনো ফসল ফলাচ্ছে। একই জমিতে বছরে ৩/৪টি ফসল ফলাচ্ছেন কৃষক। ট্রাক্টরের দাম বেশি থাকায় একশ্রেণির কৃষক চুক্তিতে টাকার বিনিময়ে জমি চাষ করে দিয়ে থাকেন। জমির মালিক ও ট্রাক্টর মালিক জমি চাষের আগে কানিপ্রতি হিসাব করে এ চুক্তি করেন। হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলের কৃষকেরা পড়েছেন বিপাকে।
দশমিনা উপজেলার কৃষক ইসহাক গাজী বলেন, ‘দুই মাস আগে জমি চাষের জন্য চুক্তি করছি, অগ্রিম টাকাও দিছি, কারণ আগে টাকা না দিলে মৌসুমে পাওয়ার টিলার পাওয়া যায় না। এখনতো তেলের দাম বাড়ছে খরচও অনেক পড়বে। সারের দামতো বাড়ছে, সব মিলিয়ে কৃষকের সামনে ফসল ফলাতে সব দিক থেকে খরচ আর খরচ। আগামী বছর জমি চাষের জন্য যে চুক্তি করা হবে সেই চুক্তিতে তখনকার বাজারদর হিসেবে ধরা হবে।’
রাঙ্গাবালী এলাকার কৃষক টিলার মালিক বাইজিদ বলেন, ‘৬ মাস হয় নতুন ট্রাক্টর কিনছি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে জমি চাষের জন্য চুক্তি করেছি, এখন তেলের দাম বেড়ে ১১৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক কানি জমি চাষ করতে ৩৫ থেকে ৪০ লিটার ডিজেল পুড়তে হয়। ২ বা ৪ টাকা বাড়তে পারে এমন হিসাব করে ৮ হাজার টাকায় এক কানি জমি চাষের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকেরা অনেকটাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যেহেতু এটা বৈশ্বিক সমস্যা এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবুও কৃষকদের যেকোনো সমস্যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরামর্শ দেবেন।’