সম্পাদকীয়
কবিকে নিয়ে ছবি করা হলো সবচেয়ে যাচ্ছেতাই কাজ। তাঁদের কাজ একেবারেই সুদৃশ্য নয়। কখনো টেবিলের সামনে অথবা সোফায় গা এলিয়ে তাঁরা নিশ্চল হয়ে বসে থাকেন দেয়ালের দিকে তাকিয়ে। কখনো হয়তো সাত লাইন লিখলেন, পনেরো মিনিট পরেই তা কাটাকুটি করে ফেললেন। আরও এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, যে সময়ের মধ্যে কিছুই হলো না। আচ্ছা বলুন তো, কে এটা দেখতে চাইবেন!
অনুপ্রেরণার বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আমিও অনেক ভেবেছি বিষয়টি নিয়ে। আমার মতে, কোনো কবি বা শিল্পীর একচ্ছত্র সম্পত্তি নয় অনুপ্রেরণার বিষয়টি। অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা ধরা দেয়। যাঁরা নিজের মনের ডাক শুনে তাঁর কাজকে বেছে নিতে পেরেছেন, ভালোবেসে, তাঁরা নিজের কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে কাজটি করতে পারেন। চিকিৎসক, শিক্ষক, উদ্যানবিদ—এ রকম অন্তত ১০০ পেশার তালিকা তৈরি করতে পারি।
তাঁদের কাজ হয়ে ওঠে এক রোমাঞ্চকর অভিযানের মতোই, যতক্ষণ তাঁরা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারেন এবং প্রতিকূলতা তাঁদের উৎসাহ ও কৌতূহলকে নিভিয়ে না দেয়। প্রতিটি সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে নতুন প্রশ্নের জন্ম হয়।অনুপ্রেরণা তা সে যেরকমই হোক না কেন, তা বরাবর একটি ধারাবাহিক বাক্য থেকে তৈরি হয়—‘আমি জানি না।’
তবে এ রকম মানুষ কমই। এই গ্রহের বেশির ভাগ বাসিন্দাই কাজ করতে হবে, তাই করে। করে, কারণ অন্য কোনো পথ নেই। নিজেদের আবেগ বা ইচ্ছানুসারে তারা কাজ বেছে নিতে পারে না। তাদের জীবনের পরিস্থিতিই তাকে কাজ বেছে দেয়। ভালোবাসাহীন কাজ, বিরক্তিকর কাজ, অন্যরা সেটুকুই পায় না বলে যে কাজের মাহাত্ম্য, তার মতো দুঃখজনক বিষয় আর বোধ হয় মানুষের কিছু নেই।
আগামী দিনে পরিস্থিতি শুধরে যাবে এমন সম্ভাবনাও তো দেখা যাচ্ছে না। আর তাই যতই আমি অনুপ্রেরণার প্রসঙ্গে কবিদের একাধিপত্যকে খারিজ করে দিই না কেন, তবু তাদের আমি এ ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবানদের দলেই রাখব।
পোলিশ কবি উইশ্লাওয়া সিমবোরস্কা ১৯৯৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান।