প্রায় ৫০ বছর ধরে অন্যের জুতা-স্যান্ডেল মেরামত করলেও হয়নি গোপী দাসের ভাগ্যের পরিবর্তন। রাস্তার পাশের ফুটপাতে বছরের পর বছর বাক্স নিয়ে বসে আছেন তিনি। বয়স আশির কোটায়। সঙ্গে রয়েছে সুই-সুতা, চিমটে, নেহাই, কাঠের তক্তা, চামড়া, চামড়া কাটার যন্ত্র এবং রং (কালি)।
ওই সব দিয়ে ছেঁড়া জুতা সেলাই আর রং বা কালি দিয়ে সুন্দরভাবে পরিপাটি করে দিচ্ছেন বাবা-ছেলে দুজন। প্রতিদিনই এমন দৃশ্য দেখা যায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বটতলা বর্তমান বকুল তলা মোড় এলাকায়।
বর্তমানে বাবার এ কাজের হাল ধরেছে ছেলে তরুণ দাস। তবে অন্য ছেলেরা এ পেশায় আসতে চান না।
সরেজমিন গতকাল বুধবার সকালে কথা হয় গোপী দাসের সঙ্গে। জানান তাঁর জীবনের সুখ দুঃখের কথা।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদারা জুতা সেলাই করতেন। তাঁদের পরে আমিও একই পেশায় কাজ করছি। কিন্তু এখন যা পাই তা দিয়ে সংসার চলেনা। মানুষের এখন টাকা হয়ে গেছে। কেউ ছেঁড়া জুতা সেলাই করে পায়ে দেন না। সারা দিনে ২০০ টাকার কাজ করাও কঠিন হয়ে যায়। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই কাজ করে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এখন আর পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকা ঋষি পাড়া হিসাবে পরিচিত। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জুতা মেরামত পেশার সঙ্গে জড়িত। যারা ছোট বেলা থেকে মুচি হিসেবে কাজ করে আসছেন শুধু তারাই পুরোনো পেশা ধরে রেখেছেন। তবে তাঁদের বেশির ভাগই চান না সন্তানরাও এই কাজ শিখুক। এখন অনেকেই সেলুনে কাজ করছে। এ অবস্থায় আমরা কয়েকটি পরিবার এখনো এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছি।’
শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘গোপী দাসকে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর তাঁর ছেলে তরুণ দাসকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫ দিনের প্রশিক্ষণ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।’