শেখ জাবেরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
ভাসমান কচুরিপানা দূরীকরণের জন্য ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হয় অ্যাকোয়াটিক উইড হারভেস্টার। এটি কেনার পর থেকে অকেজো অবস্থায় ভেসে বেড়াচ্ছে গোপালগঞ্জ শহরের মধুমতি লেকে। তাই হারভেস্টার থাকতেও সনাতন পদ্ধতিতে শ্রমিক দিয়েই পরিষ্কার করা হচ্ছে কচুরিপানাসহ জলজ আগাছা। এদিকে বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দোষ দিচ্ছে একে অপরকে।
গত ১৪ এপ্রিল গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মধুমতি লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হারভেস্টারের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে অকেজো অবস্থায় পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে ভাসমান কচুরিপানা দূরীকরণের অ্যাকোয়াটিক উইড হারভেস্টার। মেশিনটি ভাসমান জলজ আগাছা কাটা নৌকা হিসেবে পরিচিত।
গোপালগঞ্জের বেশির ভাগ নদী ও খালে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা, টোপাপানায় ভরা রয়েছে। ফলে এসব নদী-খাল থেকে সারফেস ওয়াটার ব্যবহার ব্যাহত হচ্ছে। সেসঙ্গে নৌ-চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অনুরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে একটি অ্যাকোয়াটিক উইড হারভেস্টার ক্রয় করা হয়, যাতে করে দ্রুত সময়ে ও কম খরচে গোপালগঞ্জের নদী-খাল থেকে ভাসমান কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার করা সম্ভব হয়। তবে এই যন্ত্রের কোনো সুফল পাননি গোপালগঞ্জের মানুষ।
গোপালগঞ্জ শহরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, এত টাকা দিয়ে পানির ভাসমান আগাছা পরিষ্কার করার জন্য হারভেস্টার মেশিন ক্রয় করল; কিন্তু এখন পর্যন্ত এই মেশিন দিয়ে পানির আগাছা পরিষ্কার করতে দেখিনি। এই মেশিন গোপালগঞ্জবাসীর কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
গোপালগঞ্জের একটি সেবাধর্মী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল ইমরান সুমন বলেন, এভাবে লাখ লাখ টাকার মেশিন পানিতে নষ্ট হচ্ছে কেন, এটা আমাদের বোধগম্য নয়। যে কারণে মেশিনটি কেনা হলো সে কাজ এখন পর্যন্ত একবারও করতে পারেনি। সনাতন পদ্ধতিতে শ্রমিক দিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে। তা হলে কেন পানি উন্নয়ন বোর্ড এত টাকা দিয়ে হারভেস্টার মেশিন ক্রয় করেছে?
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফায়জুর রহমান বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাম্পান ট্রেডার্সকে মেশিন কেনার কাজটি দেওয়া হয়। তবে মেশিনটি পানিতে নামানোর পর কোনো কাজ না করায় আমরা মেশিনটির হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করিনি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানো হলে একটি বিশেষজ্ঞ দল দু-মাস আগে এখানে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তারা মেশিনটি ব্যবহারের উপযোগী নয় বলে দাম সমন্বয় করে নিতে বলেন।
মেসার্স সাম্পান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ইমামুল হাসান বলেন, যে পণ্য দেওয়ার কথা ছিল আমি সেই পণ্য দিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাইড্রোলিক বাদ দিয়ে মেশিন মেপে বলছে ১ ফুট ছোট হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল, তারাও তদন্ত করে বলেছে যদি সাইজে কম মনে হয় তা হলে সেটুকু অনুপাতে বিল দিয়ে মেশিন নেওয়া যায়। মেশিন কেনার সব কাগজ দেখিয়েছি। সেখানে সাইজও উল্লেখ ছিল। এখন এর একটা মেশিন কিনতে ৫০ লাখ টাকার মতো প্রয়োজন হবে। কারণ ডলারের মূল্য বেড়ে গেছে অনেক। সবকিছু ঠিক থাকার পরও কোনো অদৃশ্য কারণে আমাকে বিল দিচ্ছে না। মেশিন ফেরত চাচ্ছি তাও দিচ্ছে না।