বারবার ধসের কারণে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না জেলাবাসী। ১০০ বছরের স্থায়িত্বের এ বাঁধ একাধিকবার ধসে পড়েছে যমুনায়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৯ জুন সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের ১৫০ মিটার ধসে নদীতেবিলীন হয়।
ভাঙনের জন্য এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। আর পাউবোর কর্মকর্তারা দায়ী করেছেন নদীর গতিপ্রকৃতি ও নির্মাণকালীন ত্রুটিকে।
জানা গেছে, প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় শহর রক্ষা বাঁধকে শক্তিশালী ও ভাঙন মেরামতের জন্য। ২০০৯ সালে প্রথম দফায় ধস নামে শহর রক্ষা বাঁধে। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই প্রথম দফা এবং ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফা হার্ড পয়েন্টে আকস্মিক ধস হয়। পানি কমে গেলে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারকাজ শুরু করা হয় এবং হার্ড পয়েন্টের উত্তরে ড্রেজিং করার জন্য ২ কোটি ৬৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এক বছর যেতে না যেতেই ২০১১ সালের ১৮ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৬ দিনের ব্যবধানে বাঁধের ২৭৫ মিটার এলাকা যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এর মধ্যে ১৮ জুলাই রাতে প্রথম দফায় ৭০ মিটার, ২২ জুলাই রাতে দ্বিতীয় দফায় ১০৫ এবং ২৪ জুলাই রাতে তৃতীয় দফায় ১০০ মিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বাঁধ ভাঙার কারণে সে সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পাউবোর অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
যমুনা নদীর ভাঙন ঠেকাতে প্রথম ব্যবস্থা নেওয়া হয় ১৯৪০ সালে। তার পর থেকে দীর্ঘ ৮০ বছরে নানাভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে ভাঙন ঠেকাতে। ইতিমধ্যে চারটি ক্রস বাঁধও নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু যমুনার পশ্চিম দিকের আগ্রাসন বন্ধ হয়নি। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তাতে বারবার ধসের ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও জেলা বাসদের আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে কাজ করতে হবে। তা না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্ষা মৌসুমে কাজ করে। যমুনা নদী নিয়ে গবেষণা দরকার। ভাঙনের প্রকৃত কারণ বের করে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।
পৌর এলাকার ধানবান্ধি মহল্লার সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা নদীপাড়ের মানুষ। বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন দেখা দেয়। বাঁধ ভাঙার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটে আমাদের।’
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে এই হার্ড পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়েছিল। আগামী ১০০ বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে এ বাঁধের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০২১ সালের ২৯ জুন শহর রক্ষা বাঁধে ধস হয়। বাঁধটি সংস্কারের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পায়নি। বাকিতে কাজ চলছে। বাঁধটি ধসের জন্য নির্মাণকালীন ত্রুটিকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন। তবে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক আছে।’