খরস্রোতা নয় সবরমতী। গুজরাটের শান্ত-স্নিগ্ধ এই নদীতীরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম সটান দাঁড়িয়ে। পুরো ক্রিকেট দুনিয়ার চোখ এখন এই স্টেডিয়ামের দিকে। আর কাল বিকেলে রোহিত শর্মার চোখ থাকল মোতেরার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে উইকেটের দিকে। যেখানে আগামীকাল রোববার ভারত-অস্ট্রেলিয়ার শিরোপার লড়াই।
ঐচ্ছিক অনুশীলনে কাল ভারতীয় দলের এসেইছিলেন পাঁচ ক্রিকেটার—রোহিতের সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজা, লোকেশ রাহুল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর প্রসিদ কৃষ্ণা। ব্যাটিং সেশনের আগে রোহিতের বেশি মনোযোগ থাকল আহমেদাবাদের উইকেটে। প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে একবার ঘুরে ঘুরে দেখলেন। খানিক পরে আবার এলেন। রীতিমতো উইকেটে হুমড়ি খেয়ে দেখতে থাকলেন। যেন উইকেটের সঙ্গে গভীর কোনো কথোপকথনে মেতেছেন ভারতীয় অধিনায়ক।
মুম্বাইয়ে সেমিফাইনালের আগে বেশ উইকেট-বিতর্ক হয়েছে ভারতীয় দলকে ঘিরে। স্বাগতিক দল হিসেবে সুবিধা নিতে ভারত সেমিফাইনালের জন্য ঠিক করে রাখা বিশ্বকাপে অব্যবহৃত নতুন উইকেটের বদলে পাশের ব্যবহৃত উইকেটে খেলতে চেয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে এই খবরে ক্রিকেট বিশ্বে বেশ হইচই। সেই বিতর্কের আগুন খুব বেশি ছড়াতে দেয়নি ওয়াংখেড়ের ওই ৭২৪ রানের ম্যাচ। যে ম্যাচে ১৪ উইকেটের ১৩টিই পেসারদের। এর মধ্যে ভারতীয় ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ শামির একারই ৭ উইকেট।
তো আহমেদাবাদের উইকেট কেমন হবে? স্বাগতিক দলের চাহিদা অনুযায়ী হবে? ভারতীয় সাংবাদিকদের যুক্তি, ফাইনালে কোনো নির্দিষ্ট দলের সুবিধা নয়, আইসিসি চাইবে জমজমাট এক ম্যাচ। আর সে কারণে ভালো স্কোর হবে, এমন উইকেট সরবরাহ করার সম্ভাবনা বেশি। কাল বিকেলেও রোলিং চলছিল উইকেটের ওপর। আহমেদাবাদের কালো মাটিতে বড় স্কোর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন একাধিক ভারতীয় সাংবাদিক।
আহমেদাবাদের ইতিহাস অবশ্য বড় স্কোরের কথা খুব একটা বলে না। এই বিশ্বকাপে এখানে হওয়া লিগ পর্বের চার ম্যাচের কোনোটিতেই রানবন্যা হয়নি। একটির স্কোরও ৩০০ পেরোয়নি। শুধু উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের দেওয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্য নিউজিল্যান্ড টপকে গিয়েছিল অনায়াসে। এখানে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচটা একেবারেই জমেনি। অস্ট্রেলিয়া এখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে ম্যাচটা খেলেছে, অলআউট হয়েছিল ২৮৬ রানে। এই স্কোর গড়েও ইংলিশদের তারা হারিয়েছে ৩৩ রানে।
এ মাঠে সর্বোচ্চ স্কোর ৩৬৫, সেই ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর আর কখনো ৩০০ রানের স্কোর দেখেনি আহমেদাবাদ। ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আহমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ভারতের। সেটিতে অস্ট্রেলিয়ার ছুড়ে দেওয়া ২৬০ রানের লক্ষ্য ভারত পেরিয়ে গিয়েছিল ৫ উইকেট হাতে রেখে। ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের তকমা নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার পর ৫০ ওভারের ক্রিকেটে খুব একটা রান উৎসবের দেখা মেলেনি এখানে। ফাইনালের মতো এত বড় চাপের ম্যাচে ভারত কি ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেই খেলতে চাইবে? যেখানে টস হারলেই ম্যাচ হারা! এই বিশ্বকাপের বৈশিষ্ট্য তো এটাই, প্রথম কোনো দল ৩০০-এর ওপর স্কোর গড়লেই ম্যাচের ফল ইনিংস বিরতিতেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
অস্ট্রেলিয়া যদি আগে ব্যাটিং করে বড় স্কোর গড়ার সুযোগ পায়, কী হতে পারে পরিণতি? স্টার স্পোর্টসের কাজে কাল বিকেলে স্টেডিয়ামে এসেছিলেন মোহাম্মদ কাইফ। ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের এ সদস্যের সঙ্গে উইকেট দেখে-টেখে অনেকক্ষণ খোশগল্প করলেন রোহিত। ভারতীয় অধিনায়ক কি কাইফের কাছে ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালের অভিজ্ঞতা শুনেছেন যে অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাটিং করলে ফাইনালের মঞ্চে কী হতে পারে? জোহানেসবার্গে ২০ বছর আগে ভারতীয় বোলারদের কাঁদিয়ে পন্টিংয়ের দল তুলেছিল ৩৫৯। এই বিশ্বকাপে ধারাভাষ্য দেওয়া পন্টিং-হেইডেন নিশ্চয়ই একই পরামর্শ বাতলে দেবেন স্মিথ-ওয়ার্নারদের।
লিগ পর্ব আর সেমিফাইনালে ‘নীল বুলডোজারে’ একে একে সবাইকে গুঁড়িয়ে অজিদের সঙ্গে শিরোপার মীমাংসায় নামার আগে রোহিতকে আহমেদাবাদের উইকেটের সঙ্গে ঠিকঠাক বোঝাপড়া করে নিতে হচ্ছে—কালকের ছবি অন্তত তা-ই বলছে।