চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার সকালে জেলাজুড়ে ঝড় হয়। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলা তাণ্ডবে জেলার সদর উপজেলায়, শিবগঞ্জে ও ভোলাহাটে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
প্রায় ২ হাজার কৃষকের ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আম ঝরে পড়ে নষ্ট হয়। এতে কত টাকার ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। ফলে ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও কয়েক দিন লাগবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
গত বৃহস্পতিবারের ঝড়ে জেলার ভোলাহাট উপজেলার আলালপুর, ফতেপুর, মান্নুমোড়, দুর্গাপুর, শিবগঞ্জ উপজেলার সত্রাজিতপুর, শ্যামপুর, নয়ালাভাঙ্গা, মনাকষা, পাঁকা, চককীর্ত্তি, কানসাট, দাইপুখুরিয়া গ্রামে বেশি ক্ষতি হয়। এ ছাড়া গোমস্তাপুর উপজেলার কিছু এলাকায় ঝড় তাণ্ডব চালায়।
শিবগঞ্জ উপজেলার আব্বাস বাজার এলাকার আমচাষি রফিকুল আলম বলেন, তাঁর বাগানে ক্ষীরশাপাতি, লক্ষ্মণভোগ, ল্যাংড়া, ফজলিসহ প্রায় ৬ জাতের ৩০০ মণ আম ছিল। কিন্তু ঝড়ে অর্ধেকের বেশি পড়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আড়াই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, কোনো বছর এ সময় ঝড় হয় না। আর এ সময় ঝড় হলে বেশি আম পড়ে। কারণ, তখন আমের পর্যাপ্ত বয়স হয়।
মোবারকপুর এলাকার আমচাষি আতাউর রহমান বলেন, আর কয়েক দিন পরই তাঁর বাগানের আম বাজারে সরবরাহ করা যেত। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের ঝড়ে অধিকাংশ গাছের আম পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর আমে টাকা পাওয়া যায়নি। এবার স্বপ্ন ছিল আম বিক্রি করে ভালো টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব শেষ করে দিয়েছে।
এই চাষিদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার প্রায় দুই হাজার আমচাষি। তাঁদের দাবি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই-বাছাই করে তাঁদের পাশে দাঁড়াবে কৃষি বিভাগ।
কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে জমজমাট হয়ে ওঠে আমের বাজার। চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হয়েছে। তার পরও যে পরিমাণ আম গাছে ছিল, তার সিংহভাগ গত বৃহস্পতিবারের ঝড়ে পড়ে গেছে। ফলে বাজারে আমের সরবরাহ কমে এসেছে। যেসব আম বাজারে আসছে, তার দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই হতাশ। তাঁর দাবি, ঝড়ে আমের ক্ষতি শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাসে বড় ঝড় দেখা যায় না। এবার ঝড়ের গতি ছিল অনেক। যার কারণে আমের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। জেলায় প্রায় ২ হাজার কৃষকের ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। তবে মোট কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। কৃষি বিভাগ কাজ করছে।