দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মাঝিরঘাটে নতুন আরও একটি ফেরিঘাট চালু করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল সফল হওয়ায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে নতুন ঘাট দিয়ে স্থায়ীভাবে ফেরি চলাচল শুরু করে বিআইডব্লিউটিসি।
প্রাথমিকভাবে মাঝিরঘাট থেকে শিমুলিয়া নৌপথে ২৪ ঘণ্টায় ৮টি ফেরিতে যানবাহন পার হবে। ঈদে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে ফেরির সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন ঘাট ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর সঙ্গে একাধিকবার ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনায় গত বছরের আগস্ট মাসে বন্ধ হয়ে যায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি চলাচল। দীর্ঘ বিরতির পর ওই রুটে দিনে ফেরি চলাচল শুরু হলেও বন্ধ থাকে রাতে যানবাহন পারাপার। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে গত বছরের আগস্টে মাঝিরঘাটে নতুন একটি ঘাট নির্মাণ করে বিআইডব্লিউটিএ। গত ডিসেম্বর থেকে এই ঘাট দিয়ে রাতে যানবাহন পারাপার শুরু করে বিআইডব্লিউটিসি। ঈদ সামনে রেখে এই ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টা ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। যানবাহনের পারাপার নির্বিঘ্ন করতে ২০ এপ্রিল পুরোনো ঘাটের পাশে নতুন করে আরও একটি ফেরিঘাট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ। মাত্র ৬ দিনের প্রচেষ্টায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ঘাট দিয়ে বুধবার সকাল থেকে স্থায়ীভাবে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে ওই ঘাট দিয়ে ছোট-বড় ৭টি ফেরিতে ৬০০-৭০০ যানবাহন পার করা হচ্ছে।
বুধবার সকালে মাঝিরঘাট ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে ডাম্প ফেরি রানীগঞ্জ নতুন ঘাটে নোঙর করেছে। ফেরিতে থাকা ছোট-বড় ৪০-৪৫টি যানবাহন আনলোড করা হচ্ছে। পুরোনো ১ নম্বর ঘাটেও একটি কে টাইপ ফেরির যানবাহন আনলোড করা হচ্ছে। একসঙ্গে দুই ঘাটে যানবাহন পার করায় ঘাটে জট কমছে। গতকাল থেকে মাঝিরঘাটে নদী পার হওয়া যানবাহনের চাপ কম। তবে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরি যানবাহনে পরিপূর্ণ হয়ে মাঝিরঘাটে নোঙর করছে।
পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যক্তিগত পরিবহনে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে রানীগঞ্জ ফেরিতে শিমুলিয়া থেকে মাঝিরঘাট এসেছেন সরোয়ার জামান। তিনি জানান, দুটি ঘাট একসঙ্গে ফেরি পারাপার করায় অনেক সুবিধা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যানবাহন পার করায় ভোগান্তি এখন অনেক কমেছে। তবে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো না হলে ঈদের সময় দুর্ভোগে পড়তে হবে।
বিআইডব্লিউটিসির মাঝিরঘাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটিমাত্র ঘাট ব্যবহার করায় আগে যানবাহন লোড-আনলোড করার সময় অন্য ফেরিকে অপেক্ষায় থাকতে হতো। এখন দুটি ঘাট দিয়ে যানবাহন পার করায় গতি ফিরে এসেছে। ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।’
জানতে চাইলে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিরাপদ নৌযাত্রা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। কাউকে সাজা দেওয়া আমাদের বড় উদ্দেশ্য নয়, সচেতনতা তৈরিই লক্ষ্য।’
আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিন আরও বলেন, প্রতিটি নৌযান ছাড়ার আগে ইঞ্জিন ও জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ঠিক রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঈদ পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।