বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে কয়েক দিন ধরেই যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বাড়ছে। ইতিমধ্যে যমুনাচরের নিম্নাঞ্চল এলাকায় রোপণ করা স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা, আমন, মরিচ, মাষকলাইসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে আংশিক ডুবেছে। এতে ফসলহানির শঙ্কায় যমুনা নদীসংলগ্ন খালের মুখগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন যমুনাপাড়ের কৃষক। প্রশাসন বলেছে, ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পানি বাড়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপজেলার সাত ইউনিয়নের ৭৭ গ্রামের কৃষক পরিবার। পানিবন্দী হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন উপজেলার ১৪ হাজার ১৮০টি পরিবারের ৫৬ হাজার ৭২০ জন গ্রামবাসী। ইতিমধ্যেই পানি দ্রুত বাড়ার কারণে যমুনাচরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বেশ কিছু গো চারণভূমি ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর থেকে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। সেদিন যমুনা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৪ দশমিক ৩০ মিটার। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৩ মিটার। গত ছয় দিনে যমুনা নদীর পানি ১ মিটার ৭৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে, ১০ অক্টোবর বাঙ্গালী নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৮৪ মিটার। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় উচ্চতা ছিল ১৩ দশমিক ১৮ মিটার। গত ছয় দিনে বাঙ্গালী নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাঙ্গালী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ২ মিটার ৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের কৃষক টিপু সুলতান বলেন, ‘পানি যে হারে বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে আমাদের সব ফসল খায়া যাবি। আমাদের গাইঞ্জা ধান ও মরিচের ফসল রক্ষা করতে গত শুক্রবার সকালে সব কৃষক এক হয়ে যমুনা নদীর খালের মুখ বন্ধ করে দিছি।’
একই ইউনিয়নের পারতিত পরল উত্তরপাড়ার কৃষক রঞ্জু মিয়া জানান, গত কয়েক দিন আগে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে অন্তারপাড়া চরে ১১ বিঘা জমিতে সবেমাত্র স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধান তিনি রোপণ করেছিলেন। গত শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তাঁর চার ভাগের তিন ভাগ ধান পানিতে আংশিক ডুবে গেছে।
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরেই সারিয়াকান্দির যমুনা এবং বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে কিনা সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে যে হারে পানি বাড়ছে তাতে বিপৎসীমা অতিক্রম করতেও পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, ‘কোথাও কোথাও গাইঞ্জা ধান পানিতে ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আজ রোববার অফিস খোলার পর পানিতে আক্রান্ত ধানের পরিমাণ সংগ্রহ শুরু করা হবে।’