নরসিংদীর রায়পুরার কুঁড়েরপাড় গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হওয়া পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইউসুফ আলীর পরিবার র্যাবের সহযোগিতায় বাড়ি ফিরতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে। গত শনিবার সকালে কুঁড়েরপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে র্যাবের ৩ সদস্য এবং ওই পরিবারের ৪ জন আহত হয়েছেন। গত রোববার সন্ধ্যায় র্যাবের ডিএডি মো. রেজাউল হক বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় পাঁচজন করে মোট ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২৫ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় র্যাব দেশি অস্ত্রসহ বাচ্চু মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর কাছ থেকে ৩টি টেঁটা ও ২টি বল্লম উদ্ধার করা হয়। এএসআই ইউসুফ আলী ঢাকায় র্যাবের সদর দপ্তরে কর্মরত আছেন।
আহতরা হলেন, র্যাবের কর্পোরাল হেলাল, এএসআই আসাদুজ্জামান, এএসআই আবদুর রাজ্জাক, ইউসুফ আলীর স্ত্রী, সন্তানসহ চারজন। তাঁদের নরসিংদীর সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার কুঁড়েরপাড়ে ভাতিজা রাকিব মিয়ার দায়ের কোপে আহত আলমগীর হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে নিহতের ভাই জুলহাস বাদী হয়ে ২৩ জনের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনার পর থেকে ভিটে মাটি ছাড়া হয় ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার। ওই মামলার আসামিদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুট করেন বাদী পক্ষের লোকজন। ওই ঘটনায় নিরীহ এএসআই ইউসুফ আলীর পরিবারকেও এলাকা ছাড়া করা হয়। এ নিয়ে এএসআই ইউসুফ আলী র্যাবের সদর দপ্তরের কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌহিদুল মবিন খানের কাছে লিখিত অভিযোগে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার র্যাবের ১০ জন সদস্যসহ ওই পরিবারটির ৫ থেকে ৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে ট্রলার যোগে কুঁড়েরপাড়ে আসেন। পৌঁছানোর পর এরশাদ গ্রুপের লোকজন তাঁদের ওপর গুলি, টেঁটা ও বল্লম ছুড়ে মারে। এতে র্যাবের ৩ সদস্য ও ওই পরিবারের ৪ জন আহত হন। এ সময় জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় র্যাব ২৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। পরে রায়পুরা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চাঁনপুর ইউপির চেয়ারম্যান মোমেন সরকার বলেন, ‘গত শনিবার র্যাব-১১ ক্যাম্পের একজন সদস্য মোবাইল ফোনে জানান, কুঁড়েরপাড় এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে র্যাবের কয়েক জন আহত হয়েছেন। আমাকে ঘটনাস্থল আসার অনুরোধ জানান। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তাঁরা চলে গেছেন।’
র্যাবের ডিএডি ও মামলার বাদী মো. রেজাউল হক বলেন, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারটি ৫ থেকে ৬ জন সদস্যকে নিয়ে কুঁড়েরপাড় ঈদগা সংলগ্ন ঘাটে পৌঁছার পরই এক দল দুর্বৃত্ত তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে র্যাবের তিন সদস্য ছাড়াও পরিবারটির কয়েক জন আহত হয়। এই বিষয়ে রায়পুরা থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে।
জেলা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, র্যাবের ওপর হামলা ও দেশীয় অস্ত্রসহ একজন আটকের ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।