মহামারি করোনার সংকট উত্তরণ হলেও কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। বেড়েছে ঝরে পড়ার সংখ্যা। ২০২১ সালে করোনা মহামারিকালেও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এ বছরের তুলনায় কম ছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। এ বছর কুমিল্লা বোর্ড থেকে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৩ জন পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে। যদিও ২০২২ সালে রেজিস্ট্রেশন করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ২৮৮ জন। রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেনি ৩৬ হাজার ৯৪৫ শিক্ষার্থী।
বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে করোনা মহামারিকালে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৪ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিল। এর মধ্যে ফরম পূরণ করে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৩ জন। গত বছর পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেনি ৩৫ হাজার ৪৯১ জন।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডের অধীনে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুর জেলায় এসএসসির জন্য মোট রেজিস্ট্রেশনকারীর সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার ২৮৮ জন; কিন্তু পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৩ জন। রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় বসছে না ৩৬ হাজার ৯৪৫ জন।
রেজিস্ট্রেশন করা ৮৯ হাজার ৫৮১ জন ছাত্রের মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ৭৮ হাজার ৩৯৬ এবং ঝরে পড়েছে ১১ হাজার ১৮৫ জন। অন্যদিকে রেজিস্ট্রেশন করা ১ লাখ ৩০ হাজার ৭০৭ ছাত্রীর মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৪৭, ঝরে পড়েছে ২৫ হাজার ৭৬০ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ছেলে শিক্ষার্থীদের চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। ঝরে পড়া মেয়ে শিক্ষার্থীর হার ১৯ দশমিক ৭ এবং ছেলে শিক্ষার্থীর হার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।
কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ সালেহা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন মোল্লা বলেন, ‘বাল্যবিবাহের কারণে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অভিভাবকদের উদাসীনতা, সচেতনতার অভাব, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে এমনটি হয়েছে, আর ছেলেরা যাচ্ছে কর্মসংস্থানের খোঁজে।’
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ না করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবাই শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়েছে এমন নয়, এর মধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত শিক্ষার্থীও রয়েছে। তবে বেশির ভাগই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর করোনা মহামারির প্রভাব শিক্ষাখাতে বেশি পড়েছিল, তখন নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি বাদ দেওয়াসহ দ্বিতীয়বার ফরম পূরণের সুযোগ দিয়েছিল বোর্ড। এবার ফরম পূরণ করে অনেক পরীক্ষার্থী স্থানান্তরিত হয়েছে, আবার অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। তা ছাড়া বাল্যবিবাহের কারণও রয়েছে।’
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার নানা সংকটে পড়েছিল। তখন ফরম পূরণে তাদের কয়েকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের পরীক্ষা পদ্ধতিতে শতভাগ উত্তীর্ণ, অকৃতকার্যের সংখ্যা নেই। ফলে অনিয়মিত হিসেবে কোনো পরীক্ষার্থী নেই। কাউকে ফরম পূরণ করতে হয়নি। সব হিসেবে দেখা যায়, এবার গড় অনুপাতে পরীক্ষার্থী বেড়েছে।’