আগামী নির্বাচনের আগে আলোচনায় আছেন মাদারীপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। তবে মাঠে এখন তাঁর সঙ্গে জল্পনা চলছে আরও দুজনকে নিয়ে। তাঁরা হলেন সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং আসনের সাবেক এমপি কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
মাদারীপুর-৩ আসনের ভোটের মাঠ কালকিনি ও সদর উপজেলায় (একাংশ) এখন এই তিন নেতাকে নিয়েই চর্চা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তি-তর্কে আছেন তাঁদের অনুসারীরা। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় এখনো মাঠে তেমন তৎপরতা নেই বিএনপির। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ না থাকায় দলটির নেতা-কর্মীরা রয়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়।
আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী সৈয়দ আবুল হোসেন এ আসন থেকে একটানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রীও ছিলেন। দীর্ঘদিন এই আসনে একক নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন আবুল হোসেন। দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আবুল হোসেন কালকিনিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্কুল ও কলেজ স্থাপন করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি সাধারণ মানুষের বিপদে সহযোগিতা করে ভোটারদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। ভদ্র ও মার্জিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাঁকে খুব পছন্দ করে।
বিশ্বব্যাংকের ‘মিথ্যা’ অভিযোগে আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব হারানো এবং দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থক ও এলাকাবাসীর দাবি, সৈয়দ আবুল হোসেনকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হোক। কালকিনির ত্যাগী ও পুরোনো নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে আবুল হোসেনকে মনোনয়ন দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, ‘মাননীয় জননেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই আমার অনুকরণীয়।’ মনোনয়নের ক্ষেত্রে এই আসনের সাবেক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নামও শোনা যাচ্ছে। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাঁর অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। এলাকায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে যোগাযোগব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অবদান রেখেছেন।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমার প্রতি এ আসনের সাধারণ জনগণের ভালোবাসা, দোয়া ও সহানুভূতি আছে। তাই যদি আমাকে দল পুনরায় মনোনয়ন দেয়, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করব। তবে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। তা মেনে নিয়ে কাজ করে যাব।’
এই আসনের আরেক শক্তিশালী প্রার্থী বর্তমান এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্রিজ, রাস্তা, কালভার্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন করেছেন তিনি।
নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নৌকার সাথে বেইমানি করা যাবে না। তাই এই আসনে নৌকার মনোনয়ন যে পাবেন, আমরা তাঁর নির্বাচনই করব।’
এদিকে কালকিনি উপজেলায় বিএনপির কর্মকাণ্ড অনেকটাই স্তিমিত। নানা কারণে দলীয় কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে কার্যক্রম। নির্বাচনে গেলে দলটি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক এবং গণশিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক এলাকার প্রবীণদের কাছে জনপ্রিয় হলেও বর্তমানে এলাকার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কম। অপর দিকে তরুণদের কাছে আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন জনপ্রিয় এবং তিনি বেশির ভাগ সময় এলাকায় থাকেন।
খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে দল অংশগ্রহণ করলে আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি। কারণ, রাজনীতিতে আমি সিনিয়র।’ জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ খালেক (খোকন) বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। তবে জোটগতভাবে নির্বাচন না হলে আমি জাপার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’