হোম > ছাপা সংস্করণ

প্রযুক্তিতে পাল্টে যাচ্ছে জিপিএইচ ইস্পাত

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

গুণগত মানের সেরা লোহার রড বানাতে ইলেকট্রিক কোয়ান্টাম আর্থ ফার্নেস (ইএফ) প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে জিপিএইচ ইস্পাতের চট্টগ্রামের নতুন কারখানায়। অত্যাধুনিক এই পদ্ধতি দেশের আর কোনো ইস্পাত কারখানায় নেই বলে দাবি জিপিএইচ কর্তৃপক্ষের। তারা বলছে, বিশ্বে ইএফ কোয়ান্টাম পদ্ধতির ইস্পাত তৈরির কারখানার মধ্যে তাঁদেরটি দ্বিতীয়। প্রথমটি উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোয়। নতুন পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে উৎপাদন পর্যায়ে জ্বলন্ত ফার্নেসের মধ্যেই যাবতীয়, ময়লা, জংসহ সব অপদ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। পরে তা ব্যাক হাউসের মাধ্যমে পরিশোধন করে ছাড়া হয় বিশুদ্ধ বাতাসযুক্ত পরিবেশে। ফলে তৈরি রডের গুণগত মান হয় সবার সেরা। আর এই রডে তৈরি ঘরবাড়ি, বিশাল ভবনসহ যাবতীয় স্থাপনা হয় টেকসই, মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে একান্তে আলাপকালে জিপিএইচ ইস্পাতের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কারখানা করেছি। সর্বোচ্চ নজর দিয়েছি পরিবেশ সুরক্ষার দিকে। এতে ব্যয় বেড়ে গেলেও নতুন কারখানার কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। আমরা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাদ দিয়ে মাটির নিচে রিজার্ভার ও লেক বানিয়ে ইস্পাত তৈরির প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করছি। ব্যাপক বনায়ন করেছি, লেকের পাড় ও আশপাশের এলাকায় গাছপালা লাগিয়ে। এতে ইস্পাত কারখানার জন্য অনিবার্য দূষণ এখন বলতে গেলে বন্ধই।’

কারখানা এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ইএফ কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার করায় নতুন প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতাও বেড়ে গেছে ১০ গুণ। আগে যেখানে প্রতিষ্ঠানটি বিলেট আমদানি করে রড বানাত, এখন সেখানে রপ্তানি হচ্ছে বিলেট। একই কারণে কমে গেছে গ্যাস, বিদ্যুতের ব্যবহার।

কর্মকর্তারা বলেন, ইস্পাত কারখানা এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমন, বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার ছড়াছড়ি থাকে। সাধারণ ইস্পাত কারখানার ক্ষেত্রে এটি কোনোভাবেই বন্ধ করা যায় না। কিন্তু জিপিএইচের কারখানায় নতুন পদ্ধতির ইলেকট্রিক কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস ও উইনলিংক প্রযুক্তির কারণে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ক্ষতিকর কণা থাকছে বড়জোর ১০ মিলিগ্রাম, যা বিশ্বব্যাংকের গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ কম।

জানা যায়, পরিবেশবান্ধব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি অস্ট্রিয়ার প্রাইমেটালস টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি করে জিপিএইচ ইস্পাত। এরপর ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিজেদের কারখানায় বসানো হয় নতুন প্রযুক্তির এই প্ল্যান্ট। গত বছরের ২১ জুন উৎপাদন শুরুর পরপরই অক্টোবর মাসেই ওই প্ল্যান্টে তৈরি প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন এমএস বিলেট রপ্তানি হয় চীনে। জিপিএইচের এই বিলেট রপ্তানি ইস্পাতশিল্পে আমদানির বিকল্প তৈরি করতে পেরেছে বলে দাবি কর্মকর্তাদের।

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, জিপিএইচ ইস্পাত কর্তৃপক্ষ মানুষের কল্যাণ ও টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করে। এর অংশ হিসেবে দেশীয় ইস্পাতশিল্পকে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে নিতে দেশে প্রথম নেওয়া হয় লেভেল ২ দশমিক ৫ অটোমেশন ও ইআরপি সমৃদ্ধ স্টেট অব দ্য আর্ট টেকনোলজি, সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল শিল্প প্রযুক্তি। এটি ইন্ডাস্ট্রি-৪ নামেও বহুল পরিচিত। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে আনা হয় ইলেকট্রিক কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস ও উইনলিংক প্রযুক্তি।

কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন কারখানায় দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর একটি ইটিপি সিস্টেমও চালু করা হয়। আমাদের কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোনো ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয় না, পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট শূন্য ডিসচার্জ সিস্টেমের সঙ্গে ডিজাইন করা হয়েছে, যা ব্যবহৃত পানির শতভাগ পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করে।

জিপিএইচ ইস্পাতের দুটি প্ল্যান্টে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন রড ও বিলেট উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

জিপিএইচ ইস্পাত সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন