লক্ষ্মীপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণের পর হত্যা করে আবারও ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন কথিত প্রেমিক সোহাগ। গত শনিবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামাল হোসেনের আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। অন্য আসামি রফিককে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জেলায় রায়পুর উপজেলার দেবীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনেরা জানান, গত ১৬ আগস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাবার বাড়ি থেকে ব্যাংকে টাকা তুলতে বের হন গৃহবধূ। এরপর নিখোঁজ হন তিনি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দেবীপুরের একটি সুপারি বাগান থেকে অর্ধগলিত অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ পাওয়া যায়। পরে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
শুক্রবার বিকেলে গৃহবধূর বাবা রায়পুর থানায় এসে নিজের মেয়ে বলে শনাক্ত করেন ওই নারীকে। এরপর অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত নিপুর বাবা।
এদিকে পুলিশ গৃহবধূর ব্যাগে থাকা ভিজিটিং কার্ডের ওপর লেখা মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্রে ধরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নালঘর থেকে সোহাগ হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে।
জানা গেছে, মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৬ আগস্ট প্রেমিক সোহাগের সঙ্গে গৃহবধূর বাড়ি থেকে বের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। সোহাগের বন্ধু রফিকের প্রলোভনে গৃহবধূকে রফিকের মামার বাড়ি রায়পুরে নিয়ে আসেন। সেখানে সোহাগ গৃহবধূর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে রফিকের মামি তাঁদের ঘর থেকে বের করে দেন। ওই বাড়ি থেকে ফেরত আসার সময় সুপারি বাগানের ভেতরে নিয়ে সোহাগ ও রফিক মিলে গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের সহযোগী রফিক হত্যার পর গৃহবধূকে আবারও ধর্ষণ করেন।
গৃহবধূর বাবার করা মামলায় সোহাগকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হয়। পরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামাল হোসেনের আদালতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা ও ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দেন সোহাগ। হত্যার পর বন্ধু রফিক আবারও গৃহবধূকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেন সোহাগ। এভাবে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন সোহাগ।
গৃহবধূর বাবা বলেন, প্রায় ৫-৬ বছর আগে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়। জামাতা দুবাইপ্রবাসী। তাঁদের ঘরে কোনো সন্তানাদি নেই। মেয়ে কিছুদিন শ্বশুরবাড়ি ও কিছুদিন আমাদের বাড়িতে থাকত। গত ১৬ আগস্ট সকালে আমাদের বাড়ি থেকে আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর বাজার শাখায় টাকা উত্তোলন করতে রওনা দিয়ে নিখোঁজ হয় মেয়ে। পরে রায়পুর থানায় এসে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করি। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এদিকে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারপরও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত পাওয়া যাবে।
লক্ষ্মীপুর জজকোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন বিষয়টিকে ন্যক্কারজনক ও আলোচিত ঘটনা দাবি করে দ্রুত সময়ে গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতক আসামিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামি হত্যা ও ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য আসামি রফিককে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। দ্রুত সময়ে আদালতে চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।