মাদারীপুরে এবারও পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবু কৃষকেরা তাঁদের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সুতার মিলে চাহিদা কম থাকার অজুহাত এনে কৃষকদের পাটের ন্যায্যমূল্য দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কৃষকেরা লোকসানে পড়ছেন। ফলে পাট উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক কৃষক।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতিদিন কৃষক তাঁদের পাট বিক্রির জন্য আসছেন। তাঁদের চাহিদামতো দাম পাচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে লোকসান গুনেই পাট বিক্রি করছেন। আবার অনেকেই পাট বিক্রি না করে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গুদামঘরে পাট ফেলে রাখছেন। এতে কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা গেছে। তাঁরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
একাধিক কৃষক জানান, জেলায় একাধিক ধরনের পাট চাষ হয়েছে। যেমন দেশীয় পাট, মেস্তা পাট ও তোষা পাট। প্রকারভেদে প্রতি মণ পাট বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত, যা গত বছরের চেয়েও ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা কম। সেখানে প্রতিবছরই সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বেড়েই চলছে। সেখানে মাদারীপুর জেলায় প্রতিবছরই পাটের দাম কমছে। এ জন্য কৃষকেরা সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন।
মাদারীপুর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় দেশি, তোষা ও মেস্তা পাট মিলে ৩৫ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ৬১ হাজার ৬৯০ টন, যা গত বছরের চেয়ে বেশি।
সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের কৃষক নয়ন ব্যাপারী বলেন, ‘এ বছর পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবু হাটে দাম পাচ্ছি মাত্র ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ প্রতি মণ পাট উৎপাদনে আমাদের খরচ হয়েছে ৪ হাজার। দাম কম থাকায় লোকসানে পড়ে যাচ্ছি।’
সদর উপজেলার খোয়াজপুর গ্রামের কৃষক সোলেমান ফকির বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আমি পাট চাষ করেছি। ফসল ভালো হয়েছে, কিন্তু ন্যায্য দাম পাচ্ছি না।’
পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আইয়ুব আলী বলেন, বর্তমানে সুতার মিলে চাহিদা কম, তাই পাটের দামও কম। মিলের চাহিদা বাড়লে আমাদের বিক্রি বাড়বে, তখন কৃষকও ভালো দাম পাবেন।
মাদারীপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন বলেন, পাটের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতায় কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে, যাতে কৃষকেরা তাঁদের ন্যায্যমূল্য পান।