অল্প বৃষ্টিতেই টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে রয়েছেন পৌরবাসী; বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেশি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণ করেছে ঠিকই, কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না। নালাগুলো অগভীর ও মাটিতে ভরে গেছে। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নালার ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে সড়কে উঠে আসে। এ ছাড়া মুষলধারে বৃষ্টি হলে নালার নোংরা পানি সড়কের পাশে বিভিন্ন |বাড়িতেও ঢুকে যায়। তখন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ হয়।
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের সমাগম অনেকটাই কম। প্রবল বৃষ্টিতে ছাতাও যেন অসহায়। এমন চিত্রই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটে উঠেছে। শহরের পার্ক বাজার, বটতলা বাজার, গোডাউন বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ছাতা মাথায় ঘোরাঘুরি করছেন কয়েকজন ক্রেতা।
এদিকে বাজারের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা পড়েন বিপাকে। হোসেন আলী নামের এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি যে জায়গায় সবজি বিক্রি করি, সেখানে পানি জমে গেছে। অন্য জায়গায় সবজি নিয়ে বসলেও ক্রেতা আসেনি। ফলে বেশির ভাগ সবজি এখনো বিক্রি করতে পারিনি।’
বেলা দুইটার সময় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় পানি জমে থাকায় তারা পার হতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা জানায়, রাস্তায় পানি থাকায় জুতা পরে রাস্তা পার হতে পারছে না। ড্রেনগুলো যদি পরিষ্কার থাকত, তাহলে দ্রুত পানি অপসারণ হয়ে যেত। এতে দুর্ভোগে পড়তে হতো না তাদের।
এ সময় কথা হয় অরণ্য নামের এক পথচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে ছোট বোনকে ট্রেনে তুলে দেওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছি। কিন্তু পথিমধ্যে বৃষ্টি নামায় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাপড়চোপড় অনেকটাই ভিজে গেছে। ভেজা কাপড়েই বোন ঢাকা যাচ্ছে। এদিকে আমি ফেরার পথে পড়েছি বিড়ম্বনায়। বৃষ্টির কারণে রিকশা পাচ্ছি না। রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই হেঁটেও যেতে পারছি না।’ পৌর কর্তৃপক্ষকে সড়কের পানিনিষ্কাশনব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিপুর এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের বিভিন্ন জায়গার নালার মধ্যে পলিথিন জমাটবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না। তাই নোংরা পানি রাস্তায় চলে এসেছে। হাঁটুপানি মাড়িয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। শহরের নালা ব্যবস্থা ভালো না করলে ভবিষ্যতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে। আমি পৌর নাগরিক হিসেবে অতি দ্রুত জলাবদ্ধতার নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
রিকশাচালক মো. কাদের আলী বলেন, ‘আমি ভাড়ায় রিকশা চালাই। সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হইতাছে। দুইডার সময় আমার রিকশা গ্যারেজে জমা দেওয়া লাগবো। বৃষ্টির কারণে শহরে লোক নাইক্যা। ট্যাহাও কামাই করতে পারতেছি না। আজকের দিনডাই আমার মাটি।’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌর মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, ‘আমি আজ ডিসি অফিস থেকে সভা শেষে ফেরার পথে বিষয়টা দেখেছি। রাস্তায় জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। আমি আমার কাউন্সিলর ও ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবে পৌরবাসী।’