ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রশাসনের পদোন্নতি বঞ্চিত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও তাঁদের দাবি বাস্তবায়নের কাঙ্ক্ষিত গতি নেই। সরকারি অফিস খোলার চার কর্মদিবস পর গতকাল রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রেষণ) অনুবিভাগে নতুন এপিডি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগের সরকারের পদোন্নতি পাওয়া এই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বঞ্চিতদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, নতুন এপিডিসহ মন্ত্রণালয়ের সবাই আগের সরকারের সুবিধাভোগী। তাঁরা বঞ্চিতদের ব্যথা বুঝবেন না। সারা দিন তাঁরা মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগ ও বারান্দায় দফায় দফায় মহড়া দিয়েছেন।
এদিকে সচিবালয়ের প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের (এও-পিও) দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে উন্নীতসহ ৬ দফা দাবিতে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী সংগঠনের’ ব্যানারে সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কয়েক শ কর্মচারী। তাঁরা পুরো সচিবালয় ঘুরে সেখানকার সাংবাদিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)’ কার্যালয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর গতকাল জনপ্রশাসনের এপিডি অনুবিভাগে নতুন অতিরিক্ত সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই অনুবিভাগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি নিয়ে কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ এই অনুবিভাগের প্রধান হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফকে পদায়ন করা হয়েছে। এর আগে এ পদে থাকা অতিরিক্ত সচিব নাজমুছ সাদাত সেলিমকে ওএসডি করা হয়। বিসিএস ১৭ ব্যাচের এই কর্মকর্তা কয়েক মাস আগেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পান। আগের সরকারের পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাকেই আবার গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরে পদায়ন করায় বঞ্চিতদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ও বারান্দায় দাঁড়িয়ে জটলা করছেন।
জানতে চাইলে পদোন্নতিবঞ্চিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বঞ্চিতদের অনেকেই মন খারাপ করেছেন, সেটা হতেই পারে। তবে আমরা নতুন এপিডির প্রতিই আস্থা রাখতে চাই। এপিডি যিনিই হোন, আমাদের গত ১৬ বছরে বঞ্চনা দূর করে দিলেই হলো। আমরা দাবি জানিয়েছি, বঞ্চিতদের তাঁদের ব্যাচমেটদের সঙ্গে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিতে হবে। আমরা আশাবাদী, বর্তমান সরকার আমাদের দাবি বিবেচনা করবে।’
এদিকে নিয়োগ পেয়েই বঞ্চিতদের পদোন্নতি ফাইল ও উপদেষ্টাদের একান্ত সচিব (পিএস) নিয়োগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন। গতকাল বিকেল ৫টায় এপিডি অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের নিজের রুমে ডেকে নিয়ে রুম বন্ধ কর দেন। এ সময় তিনি রুম থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বের হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বঞ্চিত সব কর্মকর্তার প্রতি ইনসাফ করা হবে।
বঞ্চিতদের কথা শুনলেন দুই উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকাল সচিবালয়ে প্রথমবার নিজের দপ্তরে আসেন দুই উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সকালে মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে তাঁদের দপ্তরে যান। এ সময় বিগত সরকারের আমলে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের কথা শোনেন তাঁরা।
বাংলাদেশ সচিবালয় বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী সংগঠনের ৬ দফা
নতুন সরকারের কাছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এও-পিওরা ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে তাঁরা সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁরা সাংবাদিকদের কাছে ছয় দফা তুলে ধরেন।
দাবির মধ্যে রয়েছে—সচিবালয়ে নিয়োজিত সব প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে ‘উপসহকারী সচিব’ পদনাম দিতে হবে। বিদ্যমান আইনানুযায়ী ৭ বছরে ফিডার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদোন্নতি দিয়ে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ১১-১৬ গ্রেডের কর্মচারীদের পদনাম ‘অতিরিক্ত উপসহকারী সচিব’ করতে হবে। ১৭-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের পদনাম ‘সাচিবিক সহায়ক’ করতে হবে।