দেবিদ্বার প্রতিনিধি
কুমিল্লার দেবিদ্বারে গোমতীর চর ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন দু’পাড়ের শত শত কৃষক। শীতের শুরুতে চরের উর্বর মাটিতে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।
আধুনিক কৃষির ছোঁয়া না লাগলেও কৃষকদের শ্রমে-ঘামে রঙিন হয়ে উঠেছে গোমতীর বিস্তীর্ণ চর। শাকসবজির শুভ্র হাসি ফসলের মাঠে মাঠে।
জানা গেছে, চরের এ ফসল সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বেশি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারের এসে জমি থেকে ফসল কিনে নিয়ে যান। শীত মৌসুমে পাইকারেরা বেশি আসেন এ চরে।
গত শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শীত মৌসুম শুরুর আগে লাল শাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, ধনেপাতা, আখ, মুলা, ঢ্যাঁড়স, গোল আলু, শিম, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা জাতের শাকসবজির পরিচর্যা করছেন কৃষকেরা। কেউ কেউ বেশি লাভের আশায় একই ফসলে তিন-চার রকমের শাকসবজির চাষ করছেন। নিড়ানি, জমির কেইল করা, কীটনাশক ছিটানোসহ নানা কাজ করছেন তাঁরা। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন নারীরাও।
আলমগীর হোসেন গোমতীর চরের কৃষক। তিনি ১২ শতক জমির এক অংশে লাল শাক, এক অংশে ধনে পাতা, অন্য অংশে মুলা ও ফুলকপি চাষ করছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতি বছর শীতের শুরুতে জমির পরিচর্যা বেশি করতে হয়। সংসারে সবজির চাহিদা পূরণকরে তিনি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। বিক্রির টাকায় সংসারের অন্য খরচ চলে।
আলমগীর হোসেন আরও বলেন, শীত ছাড়াও গ্রীষ্ম মৌসুমেও জমিতে শসা, ঝিঙে, পটল, বরবটি, করলা, লাউ, চাল কুমড়া, পাটশাক, কাকরোলসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। শীতে নতুন নতুন সবজিরচাহিদা বেশি হওয়ায় বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়।
কৃষক বাবুল মিয়া ৬০ শতক জমিতে দেশি শসার চাষ করেছেন। তিনি জানান, এবার শসার উৎপাদন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন।
লেখাপড়ার পাশাপাশি চরের ৫২ শতক জমিতে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চরের বাসিন্দা সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, পড়ালেখার ফাঁকে জমিতে কাজ করেন। বর্তমানে জমিতে বেগুন, ঝিঙা, করলা, শসা ও মরিচ রয়েছে।
পুরোনো বাজারের কৃষক ওয়াহেদ আলী বলেন, চরাঞ্চলের জমি অসমতল ও বালির পরিমাণ বেশি হওয়ায় একই জমিতে ছয়-সাত প্রকার ফসলের চাষ করা যায়। শুরুতে আখ চাষের জন্য জমি তৈরি করেন। পরে ওই জমিতে লাল শাক, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি চাষ করেন। এসব সবজি রোপণের ১৫-২০ দিন পর সারিবদ্ধভাবে মরিচ, ঢ্যাঁড়স ও পুঁই শাকের বীজ লাগানো হয়। দুই-এক মাসের মধ্যে সবজি বাজারেও বিক্রি করা হয়।
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন, যে চর পতিত থাকার কথা ছিল ওই চরে কৃষকের হাতের ছোঁয়ায় সোনা ফলছে। গোমতীর এ চরে বারো মাসই ফলন হয়। নদীর দু’পাশের কৃষকেরা স্ব-উদ্যোগে এসব জমি চাষাবাদ করে আসছেন।