দুইটা সপ্তাহ সময় পেলে মেহনতের ফসল মোটামুটি গুছিয়ে ঘরে তুলতে পারতেন কৃষক। কিন্তু আবহাওয়া বৈরী। সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির খবর দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এ সংকেত মিলে গেলে দুর্দিন নেমে আসবে হাওরে। পানি আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। এমনিতে গত সপ্তাহে অনেক হাওরে পানি ঢুকেই এরই মধ্যে অনেক ফসল তলিয়ে গেছে। তাই আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কৃষক। আধা পাকা ধানই কাটা শুরু করেছেন অনেকে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, তিস্তা, যমুনাসহ অনেক নদনদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় আধা পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা। বিশ্বম্ভরপুরের খরচার ও আঙ্গারুলি হাওরে গতকাল বিচ্ছিন্নভাবে ধান কাটতে দেখা গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৪৫৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আমরা দ্রুত ধান কাটার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।’
শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন হাওরেও ধান কাটছেন কৃষক। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষকেরা মিলে ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর নজর রাখছেন। কোথাও কোনো স্থানে যদি বাঁধে ফাটল দেখা দেয় অথবা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে প্রতিটি গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন থেকে দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে।
শাল্লার নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক অজয় দাস বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে কাজ করছি। এখন যে রকম খবর আসছে, তাতে আমাদের ভয় হচ্ছে। এ রকম যদি হয় তাহলে সামনে দুঃখের দিন শেষ হবে না।’
শান্তিগঞ্জ উপজেলার নাগডোরা হাওর, দাউড়িকান্দি হাওর, দেখার হাওর, সাংহাইর হাওর, কাউয়াজুরী হাওর, জামখোলা হাওরসহ বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকেরা। পাশাপাশি হাওরের ধানের খলায় তুলে ঝাড়ছেন পরিবারের সদস্যরা। কেউ খেত থেকে ধানের মুঠো টানছেন, কেউ চিটা ছাড়াচ্ছেন, কেউ রোদে ছড়ানো ধান নাড়া দিচ্ছেন, কেউ মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
শান্তিগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের কৃষক মো. মতিন মিয়া বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার অধিকাংশ বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। আগাম জাতের ধান কাটাও শুরু হয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আমার বোরো ধান কাটার উপযোগী হবে।’
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, হাওরে দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকসংকট নিরসনে উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের মাঝে কৃষি বিভাগ থেকে ২৩টি হারভেস্টার (ধান কাটার মেশিন) বিতরণ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘হাওর এলাকায় যাতে দ্রুত ধান কাটা যায়, সে জন্য ভর্তুকি দিয়ে আমরা ৩৬৫টি হারভেস্টার ও রিপার মেশিন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। ইতিমধ্যে এক শর মতো মেশিন দেওয়া হয়েছে।’