গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার এক প্রতিবন্ধী নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাৎসহ যৌন হয়রানির অভিযোগে মানববন্ধন করেছে প্রতিবন্ধীদের একটি পক্ষ। গত রোববার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ পৌরসভার সামনে থ্রি স্টার প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার বহিষ্কৃত সভাপতি শহিদ শেখের বিরুদ্ধে এ মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধীরা বলেন, শহিদ শেখ সংগঠনের সভাপতি থাকাকালীন প্রায় ৪৫০ জন সদস্যের জমা করা আড়াই বছরের সঞ্চয় অন্তত সাড়ে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের নাম ব্যবহার করে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ ঘর দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে ১০ থেকে ৩৫ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া শহিদ শেখের বিরুদ্ধে অসহায় এক প্রতিবন্ধীর মাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে কল রেকর্ড শোনান তাঁরা।
হুসাইন নামের এক প্রতিবন্ধী বলেন, সরকার থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধী নেতা হিসেবে শহিদ শেখকে নাম দেওয়ার দায়িত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রফিকুল ইসলাম। কিন্তু শহিদ শেখ ভূমি অফিস থেকে বরাদ্দ পাওয়া ১০টি ফরম বুঝে নেন। পরে ১০টি ফরম ফটোকপি করে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) স্বাক্ষর জাল করে ২০টি বানান। ওই ফটোকপি ফরম দেখিয়ে করে ১০ জনের কাছ থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেন। ২০ জনের কাছ থেকে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। পরে তাঁরা জানতে পারেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কোনো টাকা নেননি।
ইয়াসিন সরদার নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ঘর দেওয়ার কথা বলে শহিদ শেখ তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
রাহেলা বেগম নামের অপর প্রতিবন্ধী বলেন, ঘর দেওয়ার কথা বলে শহিদ শেখ তাঁর কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। এ রকম অভিযোগ করেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরও অনেক প্রতিবন্ধী।
গোয়ালন্দ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মো. রতন শেখ বলেন, শহিদ শেখের বিরুদ্ধে মাদক, যৌন হয়রানি, টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অনেক অভিযোগ আছে। সে এর আগেও পুলিশের কাছে আটক হয়েছিলেন। আত্মসাৎ করা সকল প্রতিবন্ধীদের সব টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়াসহ তাঁকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
অভিযুক্ত শহিদ শেখ বলেন, এক প্রতিবন্ধীর মাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ সম্পন্ন ভিত্তিহীন। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের সঞ্চয়ের টাকা তিনি আত্মসাৎ করেননি। কোনো সদস্য সঞ্চয়ের টাকা ফেরত চাইলে দিয়ে দেওয়া হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর নাম ব্যবহার করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সাতজন প্রতিবন্ধী লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তিনি শহিদ শেখকে ডেকে এনে ইতিমধ্যে পাঁচজনের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বাকিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শহিদ শেখ। তাই তাঁদের আদালতে মামলা দায়ের করতে বলেছেন।