ক্রীড়া ডেস্ক
প্রখ্যাত লেখক ফিওদর দস্তয়েভস্কি শায়িত আছেন সেন্ট পিটার্সবার্গে। আজকের রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালটা হওয়ার কথা ছিল দস্তয়েভস্কির এই শহরেই। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে আয়োজনের ভার চলে যায় প্যারিসে। এ যেন দস্তয়েভস্কির জটিল মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের জগৎ থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফরাসি কবিতার স্নিগ্ধতার পথে যাত্রা। রিয়াল ও লিভারপুলের লড়াইটা অবশ্য কবিতার মতো স্নিগ্ধ হবে না। বরং তাতে লড়াই ও প্রতিশোধের ঝাঁজটাই থাকবে বেশি।
ফুটবলে অমর সব মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় লড়াই ধরা হয় এই ম্যাচটিকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারাকে অনেক কিংবদন্তি ফুটবলার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ বলে মনে করেন। সম্প্রতি কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো তারকা বলেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগ তাঁর কোনো লক্ষ্য নয়, বরং এটি একটি ঘোর যা তিনি অর্জন করতে চান। অনেক ফুটবল কোচের ক্যারিয়ারও অপূর্ণ থেকে গেছে এই শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে না পেরে।
আজ রাতের দুই ফাইনালিস্টের অবশ্য সেদিক থেকে আক্ষেপটা কিছুটা কমই। দুই দলই সাম্প্রতিক সময়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন পূরণ করেছে। তবু ক্লাব ফুটবলে রাজত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতীকই হচ্ছে ইউরোপ সেরার এই খেতাবটি। এটি জিততে উন্মুখ হয়েই লড়বে ইউরোপীয় ফুটবলের দুই সফল দল রিয়াল-লিভারপুল।
রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে সফল দল। সর্বোচ্চ ১৩ বার এই শিরোপা হাতে তুলেছে তারা। দ্বিতীয় স্থান থাকা এসি মিলানের চেয়ে ৬ বার বেশি এই শিরোপা জিতেছে তারা। এবার রিয়ালের চোখ ১৪তম শিরোপায়। আগের রাউন্ডগুলোয় রিয়াল দেখিয়েছে কেন তারা এই মঞ্চে এমন সফল। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে রীতিমতো হারের মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় পেয়েছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দলটি।
সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তনের গল্পটাই লিখেছে রিয়াল। এখন ১৪তম শিরোপার পথে শুধুই একটি বাধা। প্যারিসে লিভারপুলকে হারাতে পারলে ইতিহাসের পাতায় আরেকটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা।
রিয়ালের কাজটা অবশ্য খুব সহজ হবে না। প্রতিপক্ষের নাম যে লিভারপুল। হারার আগে যারা কখনোই হারে না।
রিয়ালের পর ইউরোপে সেরা দলের তালিকা করলে ওপরেই রাখতে হবে ‘অল রেড’দের। লম্বা সময়ের ব্যর্থতার পর ইয়ুর্গেন ক্লপের জাদুর ছোঁয়ায় তারা বদলে যাওয়া এক দল। বর্তমানে দারুণ ছন্দেও আছে ক্লপের দল। চলতি মৌসুমে এফএ কাপ ও লিগ কাপ জিতে ঘরোয়া ডাবল নিশ্চিত করেছে তারা।
শেষ ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির নাটকীয় প্রত্যাবর্তন না ঘটালে জিততে পারত লিগও। তবে লিগ জেতার স্বপ্ন পূরণ না হলেও, এখনো সুযোগ আছে ট্রেবল জেতার। পাশাপাশি এবারের ফাইনাল লিভারপুলের জন্য প্রতিশোধের মঞ্চও বটে। ২০১৮ সালে ফাইনালে রিয়ালের কাছে শিরোপা হাতছাড়া করেছিল অ্যানফিল্ডের দলটি। সেই ম্যাচে লিভারপুল তারকা মোহামেদ সালাহকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার অভিযোগও উঠেছিল রিয়াল ডিফেন্ডার সার্জিও রামোসের ওপর। রামোস না থাকলেও প্রতিশোধের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রেখেছেন সালাহ। ক্লপ নিজে অবশ্য প্রতিশোধের ধারণায় বিশ্বাস করেন না বলে জানিয়েছেন।
তবে মুখে অস্বীকার করলেও সেই হারের ক্ষত এখনো মুছতে পারেনি লিভারপুলের খেলোয়াড় ও সমর্থকেরা। ফাইনালেও সেই ঝাঁজটা দেখতে চাইবে তারা। আর রিয়াল চাইবে ইউরোপে নিজেদের চিরকালীন দাপটকে আরেকটু দৃঢ় করতে। আর দুই দলের এমন অবস্থানই চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের সুবাসকে ছড়িয়ে দেবে ফুটবল বিশ্বে।