জহুরুল ইসলাম জহির, হরিণাকুণ্ডু
স্বামী শাহাদত হোসেন মন্ডল (৬০) একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। একমাত্র ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৫) বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। স্বামী-সন্তানের পাশাপাশি রয়েছে আরও দুই প্রতিবন্ধী বোন। আর এই চারজনের দায়িত্ব একজনের কাঁধে। বলছি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফতেপুর গ্রামের নতেজা বেগমের কথা। প্রতিবন্ধীদের দেখভালসহ সবই করতে হয় তাকে। সবার দায়িত্ব নিতে গিয়ে কষ্টে দিন যাচ্ছে হতদরিদ্র নতেজা বেগমের।
উপজেলার ফতেপুর গ্রামের মৃত জালাল মন্ডলের কন্যা নতেজা। জালাল মন্ডলের ৪ ছেলে আর ৫ মেয়ে। ছেলেগুলো জন্মের পরপরই মারা যায়। জীবিত ৫ মেয়ের মধ্যে ৩ জন প্রতিবন্ধী। মেজ মেয়ে নতেজা বেগম আর ছোট মেয়ে ফাতেমা খাতুন শারীরিকভাবে সুস্থ। নতেজা প্রতিবন্ধী বোনদের দায়িত্ব নিয়ে বিয়ের পরও বাবার বাড়িতেই থাকেন। আর ফাতেমা বিয়ে করে অন্যত্র সংসার করছেন।
সরেজমিনে নতেজা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে ভ্যান গাড়ির ওপর বসে আছেন তার স্বামী শাহাদত হোসেন। ভেতরে উঠানে বসে আছেন শহিদুল ইসলাম। আর ঘরের মধ্যে শুয়ে আছে দুই বোন হামিদা খাতুন আর কুলসুম খাতুন। নতেজা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এটা তার বাবার বাড়ি। তার মায়ের গর্ভে ৫টি ছেলে সন্তান হয়েছিল, যারা সবাই মারা গেছে। তারা ছিলেন ৫ বোন। তার যখন বিয়ে হয় তখন ফাতেমা খুবই ছোট। বড় তিন প্রতিবন্ধী বোনের দেখাশোনা করার জন্য তাকে ঘরজামাই থাকতে রাজি এমন একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন। শাহাদত হোসেন তাকে বিয়ে করে এই বাড়িতে থাকেন। তার দুই পায়ে সমস্যা রয়েছে। ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। তারপরও সংসার চালাতে অন্যের জমিতে কামলা খাটেন তিনি।
সরকারি অর্থসহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে নতেজা বেগম বলেন, তাদের পরিবারে চারজন প্রতিবন্ধী হলেও ভাতা পান দুজন। বাকি দুজনের ভাতাপ্রপ্তির জন্য অনেক ঘুরেছেন, কিন্তু আজও পাননি। দুজন যে ভাতা পান তা দিয়ে তাদের ওষুধও কেনা সম্ভব হয় না।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিউলী রানী বলেন, পরিবারটির দুজন ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসেছেন, আশা করছি ভবিষ্যতে বাকি দুজনকেও ভাতার আওতায় আনা হবে।