উইল ডুরান্ট বলেছিলেন, ‘সভ্যতা শৃঙ্খলার সঙ্গে শুরু হয়, স্বাধীনতার সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এবং বিশৃঙ্খলার সঙ্গে মারা যায়।’ স্বাভাবিকভাবেই, মানুষ তৈরি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংগঠিত করার প্রয়োজন অনুভব করে এবং কোনো না কোনোভাবে পরিকল্পনা অনুশীলন করে। তাই নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ শুধু জ্ঞানের একটি শৃঙ্খলা নয়, সম্ভবত টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য চিন্তার একটি বিশেষ উপায়।
যাত্রা শুরু
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের অধীনে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬২ সালে। স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু হয় ঠিক ছয় বছর পর, ১৯৬৮ সালে। স্নাতক প্রোগ্রাম ও পিএইচডি প্রোগ্রাম একই সঙ্গে ১৯৯৬ সালে শুরু হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বিভাগ রয়েছে।
যা পড়ানো হয়
মানববসতির যে প্রধান দিকগুলো রয়েছে, সেগুলো এ বিভাগে পড়ানো হয়। ভৌত দিক, পরিবেশগত দিক, সামাজিক-রাজনৈতিক দিক, অর্থনৈতিক দিক সবিস্তারে আলোচনা করা হয়ে থাকে। নগর-পরিকল্পনা, গ্রামীণ পরিকল্পনা, পরিবেশগত পরিকল্পনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি নগর-পরিকল্পনার প্রধান শাখা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
রয়েছে স্টুডিও
একজন শিক্ষার্থীকে চার বছর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ সম্পর্কিত খুঁটিনাটি ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি বাস্তবিক প্রয়োগ হাতেকলমে শেখানো হয়। আমরা তাত্ত্বিক জ্ঞান বিকাশের পাশাপাশি সময়োপযোগী দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে নজর দিয়ে থাকি। রয়েছে বেশ কিছু কোর্সের জন্য স্টুডিও সংযুক্তি। এর মধ্যে পরিবহন স্টুডিও, নগর-পরিকল্পনা স্টুডিও অন্যতম। নগর-পরিকল্পনায় ২-৩টা তত্ত্ব পড়ানোর পর স্টুডিওতে তার ওপর ফিল্ডওয়ার্ক করানো হয়। শিক্ষার্থীদের একটি সুনির্দিষ্ট অধ্যয়নের ক্ষেত্র দেওয়া হয়, সেখান থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করে, প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, সমস্যা খুঁজে বের করে, সমস্যার সমাধান করে, আর সেটার জন্য ডিজাইন ডেভেলপ করে।
কেন প্রয়োজন
আমরা যদি দেশের দিকে তাকাই বা পৃথিবীর যেকোনো দেশের দিকে তাকাই, টেকসই উন্নয়ন সর্বত্র সবাই চায়; তবে একটা বড় অংশে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব লক্ষ করা যায়। পরিকল্পনার অভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ দেখি, কৃষিক্ষেত্রেও অপরিকল্পিত উন্নয়ন দেখি, আবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দেখি দুর্যোগ নানাভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেই দুর্যোগকে কীভাবে যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে, তা আমরা পড়িয়ে থাকি। একটা উন্নয়নকে টেকসই করার জন্য যা যা প্রয়োজন, সেগুলো নিয়েই আমরা কাজ করি। পরিকল্পনা যদি যথার্থ না হয়, আমরা যতই বিনিয়োগ করি না কেন, যত টাকাপয়সা খরচ করি না কেন, সেটা টেকসই হবে না। পরিকল্পনার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সম্পদের সুষম বণ্টন। অর্থাৎ যে সম্পদ আছে, মানুষের মধ্যে তা যেন সমভাবে বিতরণ করতে পারি। অনেক সময় দেখা যায়, পরিকল্পনা করা হয় বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে। এটা যেন না হয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বা অনগ্রসর গোষ্ঠীও যেন সুযোগ-সুবিধা পায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করি।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির সুযোগ
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। আমাদের প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গমন করে থাকেন। অনেকেই সেখানে থেকে যান, অনেকে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, গবেষণায় কাজ করছেন, ওখানকার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও অনেকটা তা-ই। তবে বৈচিত্র্যময় বিষয় হওয়ায় কাজের পরিসর বিস্তৃত। বিভিন্ন ধরনের সরকারি নগর উন্নয়ন সংস্থা, যেমন রাজউক, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, পরিকল্পনা কমিশন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রভৃতিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। সুযোগ রয়েছে ইউনেসকো, ইউনিসেফ, ইউএনডিপির মতো প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বেসরকারি সংস্থাতেও কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে পরিকল্পনাবিদদের।